পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭১৬
শ্যামলী

চলা আটক করে ফেলে রেখেছেন
কালস্রোতের ও পারে বালুডাঙায়।
সেখান থেকে দেখি
প্রখর আলোয় ঝাপসা দূরের জগৎ;
বিনা কারণে কাঙাল মন অধীর হয়ে ওঠে;
দুই হাত বাড়িয়ে দিই,
নাগাল পাই নে কিছুই কোনো দিকে ৷

বেলা তো কাটে না—
বসে থাকি জোয়ার-জলের দিকে চেয়ে,
ভেসে যায় মুক্তিপারের খেয়া,
ভেসে যায় ধনপতির ডিঙা,
ভেসে যায় চলতি বেলার আলোছায়া।
এমন-সময় বাজে তোমার বাঁশি
ভরা জীবনের সুরে।
মরা দিনের নাড়ীর মধ্যে
দব্‌দবিয়ে ফিরে আসে প্রাণের বেগ।

কী বাজাও তুমি,
জানি নে সে সুর জাগায় কার মনে কী ব্যথা।
বুঝি বাজাও পঞ্চম রাগে
দক্ষিণ হাওয়ার নবযৌবনের ভাটিয়ারি।
শুনতে শুনতে নিজেকে মনে হয়
যে ছিল পাহাড়তলির ঝির্‌ঝিরে নদী
তার বুকে হঠাৎ উঠেছে ঘনিয়ে
শ্রাবণের বাদল-রাত্রি।
সকালে উঠে দেখা যায় পাড়ি গেছে ভেসে,
একগুঁয়ে পাথরগুলোকে ঠেলা দিচ্ছে
অসহ্য স্রোতের ঘূর্ণিমাতন।