পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছড়ার ছবি
৭৬৩

‘ওরে ভজু, ওরে বাঁদর, ওরে লক্ষ্মীছাড়া’
হাঁক দিয়ে তাঁর ভারী গলায় মাতিয়ে দিতেন পাড়া।
চার দিকে তাঁর ছোটো বড়ো জুটত যত লোভী
কেউ বা পেত মার্বেল কেউ গণেশ-মার্কা ছবি,
কেউ বা লজঞ্জুস—
সেটা ছিল মজলিশে তাঁর হাজরি দেবার ঘুষ।
কাজলি যদি অকারণে করত অভিমান
হেসে বলতেন ‘হাঁ করো তো’, দিতেন ছাঁচিপান।
আপন-সৃষ্ট নাৎনিও তাঁর ছিল অনেকগুলি—
পাগলি ছিল, পটলি ছিল, আর ছিল জঙ্গুলি।
কেয়াখয়ের এনে দিত, দিত কাসুন্দিও—
মায়ের হাতের জারক লেবু যোগিন্‌দাদার প্রিয়।

তখনো তাঁর শক্ত ছিল মুগুর-ভাঁজা দেহ—
বয়স যে ষাট পেরিয়ে গেছে, বুঝত না তা কেহ।
ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি, চোখদুটি জল্‌জ্জ্বলে;
মুখ যেন তাঁর পাকা আমটি, হয় নি সে থল্‌থলে।
চওড়া কপাল, সামনে মাথায় বিরল চুলের টাক,
গোঁফজোড়াটার খ্যাতি ছিল— তাই নিয়ে তাঁর জাঁক।

দিন ফুরোত, কুলুঙ্গিতে প্রদীপ দিত জ্বলি;
বেলের মালা হেঁকে যেত মোড়ের মাথায় মালী।
চেয়ে রইতেম মুখের দিকে শান্ত শিষ্ট হয়ে;
কাঁসর ঘণ্টা উঠত বেজে গলির শিবালয়ে।
সেই সেকালের সন্ধ্যা মোদের সন্ধ্যা ছিল সত্যি,
দিন-ভেঙানো ইলেক্‌ট্টিকের হয় নিকো উৎপত্তি।
ঘরের কোণে কোণে ছায়া; আঁধার বাড়ত ক্রমে—
মিট্‌মিটে এক তেলের আলোয় গল্প উঠত জমে।