পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রান্তিক
৭৭৭

দিল মোরে করস্পর্শ; প্রসারিল দীপ্ত শিল্পকলা
অন্তরের দেহলিতে; গভীর অদৃশ্য লোক হতে
ইশারা ফুটিয়া পড়ে তুলির রেখায়। আজন্মের
বিচ্ছিন্ন ভাবনা যত, স্রোতের শেঁউলি-সম যারা
নিরর্থক ফিরেছিল অনিশ্চিত হাওয়ায় হাওয়ায়,
রূপ নিয়ে দেখা দেবে ভাঁটার নদীর প্রান্ততীরে
অনাদৃত মঞ্জরির অজানিত আগাছার মতো—
কেহ শুধাবে না নাম; অধিকারগর্ব নিয়ে তার
ঈর্ষা রহিবে না কারো; অনামিক স্মৃতিচিহ্ন তারা
খ্যাতিশূন্য অগোচরে রবে যেন অস্পষ্ট বিস্মৃতি।

শান্তিনিকেতন
১৮ ডিসেম্বর ১৯৩৭


পরমমূল্য

একদা পরমমূল্য জন্মক্ষণ দিয়েছে তোমায়,
আগন্তুক! রূপের দুর্লভ সত্তা লভিয়া বসেছ
সূর্যনক্ষত্রের সাথে। দূর আকাশের ছায়াপথে
যে আলোক আসে নামি ধরণীর শ্যামল ললাটে
সে তোমার চক্ষু চুম্বি তোমারে বেঁধেছে অনুক্ষণ
সখ্যডোরে দ্যুলোকের সাথে; দূর যুগান্তর হতে
মহাকালযাত্রী মহাবাণী পুণ্য মুহূর্তেরে তব
শুভক্ষণে দিয়েছে সম্মান; তোমার সম্মুখদিকে
আত্মার যাত্রার পন্থ গেছে চলি অনন্তের পানে—
সেথা তুমি একা যাত্রী অফুরন্ত এ মহাবিস্ময়।

শান্তিনিকেতন
১৯ ডিসেম্বর ১৯৩৭