পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আকাশপ্রদীপ
৭৮৯

বধূ

ঠাকুরমা দ্রুত তালে ছড়া যেত পড়ে,
ভাবখানা মনে আছে— বউ আসে চতুর্দোলা চ’ড়ে
আম কাঁঠালের ছায়ে,
গলায় মোতির মালা, সোনার চরণচক্র পায়ে।

বালকের প্রাণে
প্রথম সে নারীমন্ত্র আগমনীগানে
ছন্দের লাগালো দোল আধোজাগা কল্পনার শিহরদোলায়,
আঁধার-আলোর দ্বন্দ্বে যে প্রদোষে মনেরে ভোলায়,
সত্য-অসত্যের মাঝে লোপ করি সীমা
দেখা দেয় ছায়ার প্রতিমা।

ছড়া-বাঁধা চতুর্দোলা চলেছিল যে গলি বাহিয়া
চিহ্নিত করেছে মোর হিয়া
গভীর নাড়ীর পথে অদৃশ্য রেখায় এঁকেবেঁকে।
তারি প্রান্ত থেকে
অশ্রুত সানাই বাজে অনিশ্চিত প্রত্যাশার সুরে
দুর্গম চিন্তার দূরে দূরে।
সেদিন সে কল্পলোকে বেহারাগুলোর পদক্ষেপে
বক্ষ উঠেছিল কেঁপে কেঁপে;
পলে পলে ছন্দে ছন্দে আসে তারা, আসে না তবুও—
পথ শেষ হবে না কভুও।

সেকাল মিলালো। তার পরে, বধূ-আগমনগাথা
গেয়েছে মর্মরছন্দে অশোকের কচি রাঙা পাতা,
বেজেছে বর্ষণঘন শ্রাবণের বিনিদ্র নিশীথে,
মধ্যাহ্নে করুণ রাগিণীতে
বিদেশী পান্থের শ্রান্ত সুরে।