পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৯০
আকাশপ্রদীপ

অতিদূর মায়াময়ী বধূর নূপুরে
তন্দ্রার প্রত্যন্তদেশে জাগায়েছে ধ্বনি
মৃদু রণরণি।
ঘুম ভেঙে উঠেছিনু জেগে;
পূর্বাকাশে রক্ত মেঘে
দিয়েছিল দেখা
অনাগত চরণের অলক্তের রেখা।
কানে কানে ডেকেছিল মোরে
অপরিচিতার কণ্ঠ নাম ধ’রে,
সচকিতে,
দেখে তবু পাই নি দেখিতে।

অকস্মাৎ একদিন কাহার পরশ
রহস্যের তীব্রতায় দেহে মনে জাগালো হরষ;
তাহারে শুধায়েছিনু অভিভূত মুহূর্তেই,
‘তুমিই কি সেই,
আঁধারের কোন্ ঘাট হতে
এসেছ আলোতে!’
উত্তরে সে হেনেছিল চকিত বিদ্যুৎ;
ইঙ্গিতে জানায়েছিল, ‘আমি তারি দূত;
সে রয়েছে সব প্রত্যক্ষের পিছে,
নিত্যকাল সে শুধু আসিছে।
নক্ষত্রলিপির পত্রে তোমার নামের কাছে
যার নাম লেখা রহিয়াছে,
অনাদি অজ্ঞাত যুগে সে চড়েছে তার চতুর্দোলা;
ফরিছে সে চির-পথভোলা
জ্যোতিষ্কের আলোছায়ে—
গলায় মোতির মালা, সোনার চরণচক্র পায়ে।’

 ২৫ অক্টোবর ১৯৩৮