পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮১০
ছড়া

বিষম খিদেয় করল চুরি রামছাগলের দুধ,
তারি সঙ্গে মিশিয়ে নিলে গম-ভাঙানির খুদ।
ওই শোনা যায় রেডিয়োতে বোঁচা গোঁফের হুমকি—
দেশ-বিদেশে শহর-গ্রামে গলা কাটার ধুম কী!
খাঁচায়-পোষা চন্দনাটা ফড়িঙে পেট ভরে;
সকাল থেকে নাম করে গান, হরে কৃষ্ণ হরে।

বালুর চরে আলুহাটা, হাতে বেতের চুপড়ি,
খেতের মধ্যে ঢুকে কালু মুলো নিল উপড়ি।
নদীর পাড়ে কিচির-মিচির লাগালো গাঙশালিখ যে,
অকারণে ঢোলক বাজায় মুলোখেতের মালিক যে।
কাঁকুড়-খেতে মাচা বাঁধে পিলেওয়ালা ছোকরা,
বাঁশের বনে কঞ্চি কাটে মুচিপাড়ার লোকরা।
পাটনাতে নীলকুঠির গঞ্জে খেয়া চালায় পাটনি,
রোদে জ্বলে নিতুই চলে চার পহরের খাটনি;
কড়াপড়া কঠিন হাতে মাজা কাঁসার কাঁকনটা,
কপালে তার পত্রলেখা উল্কি-দেওয়া আঁকনটা।
কুচোমাছের টুকরি থেকে চিলেতে নেয় ছোঁ মেরে—
মেছুনি তার সাত গুষ্টি উদ্দেশে দেয় যমেরে।
ও পারেতে খড়্গপুরে কাঠি পড়ে বাজনায়,
মুন্সিবাবু হিসেব ভোলে জমিদারের খাজনায়।
রেডিয়োতে খবর জানায় বোমায় করলে ফুটো,
সমুদ্‌দুরে তলিয়ে গেল মালের জাহাজ দুটো।
খাঁচার মধ্যে ময়না থাকে; বিষম কলরবে
ছাতু ছড়ায়, মাতায় পাড়া আত্মারামের স্তবে।

হুইস্‌ল্ দিল প্যাসেঞ্জারে সাঁৎরাগাছির ড্রাইভার;
মাথায় মোছে হাতের কালী, সময় না পায় নাইবার।