পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪৫
গ্রন্থপরিচয়
৮৪৫

১০৮ সোনার তরী। এক কালে ইহার তাৎপর্য লইয়া বহু বিতর্কের সৃষ্টি হয়। শান্তিনিকেতন গ্রন্থের ‘তরী বোঝাই’ নিবন্ধে কবি স্বয়ং এই ভাবে রচনাটির ব্যাখ্যা করেন—

‘সোনার তরী’ ব’লে একটা কবিতা লিখেছিলুম, এই উপলক্ষ্যে তার একটা মানে বলা যেতে পারে।—মানুষ সমস্ত জীবন ধরে ফসল চাষ করছে। তার জীবনের খেতটুকু দ্বীপের মতো, চারি দিকেই অব্যক্তের দ্বারা সে বেষ্টিত, ওই একটুখানিই তার কাছে ব্যক্ত হয়ে আছে— সেইজন্যে গীতা বলেছেন—

অব্যক্তাদীনি ভূতানি ব্যক্তমধ্যানি ভারত।
অব্যক্তনিধনান্যেব তত্র কা পরিদেবনা।

যখন কাল ঘনিয়ে আসছে, যখন চারি দিকের জল বেড়ে উঠছে, যখন আবার অব্যক্তের মধ্যে তার ওই চরটুকু তলিয়ে যাবার সময় হল, তখন তার সমস্ত জীবনের কর্মের যা-কিছু নিত্য ফল তা সে ওই সংসারের তরণীতে বোঝাই ক’রে দিতে পারে। সংসার সমস্তই নেবে, একটি কণাও ফেলে দেবে না, কিন্তু যখন মানুষ বলে ‘ওই সঙ্গে আমাকেও নাও’ ‘আমাকেও রাখো’ তখন সংসার বলে, ‘তোমার জন্যে জায়গা কোথায়? তোমাকে নিয়ে আমার হবে কী? তোমার জীবনের ফসল যা-কিছু রাখবার তা সমস্তই রাখব, কিন্তু তুমি তো রাখবার যোগ্য নও।’— প্রত্যেক মানুষ জীবনের কর্মের দ্বারা সংসারকে কিছু-না-কিছু দান করছে, সংসার তার সমস্তই গ্রহণ করছে, রক্ষা করছে, কিছুই নষ্ট হতে দিচ্ছে না; কিন্তু মানুষ যখন সেই সঙ্গে অহংকেই চিরন্তন করে রাখতে চাচ্ছে তখন তার চেষ্টা বৃথা হচ্ছে। এই যে জীবনটি ভোগ করা গেল অহংটিকেই তার খাজনা-স্বরূপ মৃত্যুর হাতে দিয়ে হিসাব চুকিয়ে যেতে হবে; ওটি কোনোমতেই জমাবার জিনিস নয়। ৪ চৈত্র ১৩১৫

‘সোনার তরী’ কবিতা যে প্রাকৃতিক পরিবেশের স্মৃতিতে লেখা হইয়াছে কবিকর্তৃক তাহার উল্লেখ, চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখিত