পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৮৬৯
সঞ্চয়িতা
৮৬৯
             গ্রন্থপরিচয়                 ৮৬৯
   অনেক দিনের কথা হল,স্বপ্নে দেখেছিনু,
   হঠাৎ যেন চেঁচিয়ে উঠে বললে আমায় বিশু
  “চেয়ে দেখো"- ছুটে দেখি চৌকিখানা ছেড়ে,
   কলকাতাটা চলে বেড়ায় ইঁটের শরীর নেড়ে ।
   উচু ছাদে নিচু ছাদে পাঁচিল-দেওয়া ছাদে
   আকাশ যেন সওয়ার হয়ে চড়েছে তার কাঁধে।
   রাস্তা গলি যাচ্ছে চলি অজগরের দল,
   ট্রামগাড়ি তার পিঠে চেপে করছে টলমল ।
   দোকান বাজার ওঠে নামে যেন ঝড়ের তরী,
   চউরঙ্গির মাঠখান। ওই যাচ্ছে সরি সরি ।
   মনুমেণ্টে লেগেছে দোল, উলটিয়ে বা ফেলে--
   খ্যাপা হাতির শুঁড়ের মতে। ডাইনে বাঁয়ে হেলে ।
   ইস্কুলেতে ছেলেরা সব করতেছে হৈ হৈ-_
   অঙ্কের বই নৃত্য করে ব্যাকরণের বই ।
   মেজের 'পরে গড়িয়ে বেড়ায় ইংরেজি বইখানা,
   ম্যাপগুলো সব পাখির মতো ঝাপট মারে ডানা ।
   ঘণ্টাখানা দুলে দুলে ঢঙ ঢঙা ঢঙ বাজে--
   দিন চলে যায়, কিছুতে সে থামতে পারে না যে।
   রান্নাঘরে কেঁদে বলে রান্নাঘরের ঝি,
   লাউ কুমড়ো! দৌড়ে বেড়ায়, আমি করব কী ?”
   হাজার হাজার মানুষ চেঁচায়, আরে থামো থামো
   কোথা যেতে কোথায় যাবে, কেমন এ পাগলামো !
  “আরে আরে চলল কোথায় হাবড়ার ব্রিজ বলে,
  “একটুকু আর নড়লে আমি পড়ব খসে জলে ।
   বড়োবাজার মেছোবাজার চীনেবাজার থেকে
  "স্থির  হয়ে রও” “স্থির হয়ে রও" বলে সবাই হেঁকে!
   আমি ভাবছি, যাক-না কেন, ভাবনা কিছুই নাই”
   কলকাতা নয় দিল্লি যাবে কিনবা সে বোস্বাই ৷