পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানসী
৮৭

লজ্জা সহসা আসি অকারণে
বসনের মতো রাঙা আবরণে
চাহিয়াছিল কি ঢাকিতে তোমায় লুব্ধ নয়ন হতে?
মোহচঞ্চল সে লালসা মম
কৃষ্ণবরন ভ্রমরের সম
ফিরিতেছিল কি গুন্‌গুন্ কেঁদে তোমার দৃষ্টিপথে?

আনিয়াছি ছুরি তীক্ষ্ণ দীপ্ত প্রভাতরশ্মিসম;
লও, বিঁধে দাও বাসনাসঘন এ কালো নয়ন মম।
এ আঁখি আমার শরীরে তো নাই, ফুটেছে মর্মতলে—
নির্বাণহীন অঙ্গারসম নিশিদিন শুধু জ্বলে।
সেথা হতে তারে উপাড়িয়া লও জ্বালাময় দুটো চোখ;
তোমার লাগিয়া তিয়াষ যাহার সে আঁখি তোমারি হোক।

অপার ভুবন, উদার গগন, শ্যামল কাননতল,
বসন্ত অতি মুগ্ধমুরতি, স্বচ্ছ নদীর জল,
বিবিধবরন সন্ধ্যানীরদ, গ্রহতারাময়ী নিশি,
বিচিত্রশোভা শস্যক্ষেত্র প্রসারিত দূর দিশি,
সুনীল গগনে ঘনতর নীল অতিদূর গিরিমালা,
তারি পরপারে রবির উদয় কনককিরণ-জ্বালা,
চকিতড়িৎ সঘন বরষা, পূর্ণ ইন্দ্রধনু,
শরৎ-আকাশে অসীমবিকাশ জ্যোৎস্না শুভ্রতনু—
লও, সব লও, তুমি কেড়ে লও, মাগিতেছি অকপটে—
তিমিরতুলিকা দাও বুলাইয়া আকাশচিত্রপটে।

ইহারা আমারে ভুলায় সতত, কোথা নিয়ে যায় টেনে;
মাধুরীমদিরা পান ক’রে শেষে প্রাণ পথ নাহি চেনে।
সবে মিলে যেন বাজাইতে চায় আমার বাঁশরি কাড়ি;
পাগলের মতো রচি নব গান, নব নব তান ছাড়ি।