পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানসী
৮৯

ক্রমে ধীরে ধীরে নিবিড় তিমিরে ফুটিয়া উঠিবে নাকি
পবিত্র মুখ, মধুর মূর্তি, স্নিগ্ধ আনত আঁখি?
এখন যেমন রয়েছ দাঁড়ায়ে দেবীর প্রতিমা সম,
স্থির গম্ভীর করুণ নয়নে চাহিছ হৃদয়ে মম,
বাতায়ন হতে সন্ধ্যাকিরণ পড়েছে ললাটে এসে,
মেঘের আলোক লভিছে বিরাম নিবিড়তিমির কেশে—
শান্তিরূপিণী এ মুরতি তব অতি অপূর্ব সাজে
অনলরেখায় ফুটিয়া উঠিবে অনন্তনিশি-মাঝে।
চৌদিকে তব নূতন জগৎ আপনি সৃজিত হবে;
এ সন্ধ্যাশোভা তোমারে ঘিরিয়া চিরকাল জেগে রবে।
এই বাতায়ন, ওই চাঁপাগাছ, দূর সরযূর রেখা,
নিশিদিনহীন অন্ধ হৃদয়ে চিরদিন যাবে দেখা।
সে নব জগতে কালস্রোত নাই, পরিবর্তন নাহি—
আজি এই দিন অনন্ত হয়ে চিরদিন রবে চাহি।

তবে তাই হোক, হোয়ো না বিমুখ— দেবী, তাহে কিবা ক্ষতি,
হৃদয়-আকাশে থাক্‌-না জাগিয়া দেহহীন তব জ্যোতি।
বাসনামলিন আঁখিকলঙ্ক ছায়া ফেলিবে না তায়,
আঁধার হৃদয় নীল-উৎপল চিরদিন রবে পায়।
তোমাতে হেরিব আমার দেবতা, হেরিব আমার হরি—
তোমার আলোকে জাগিয়া রহিব অনন্ত বিভাবরী।

 ২২ ও ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১২৯৫


ভৈরবী গান

ওগো, কে তুমি বসিয়া উদাসমুরতি
বিষাদশান্ত শোভাতে!
ওই ভৈরবী আর গেয়ো নাকো এই প্রভাতে
মোর গৃহছাড়া এই পথিকপরান