পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৩২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পৌরাণিকী

 দেখিতে দেখিতে কৃত্তিকা ও রোহিণী উপনীতা হইলেন। স্বাহাও তাঁহাদের পার্শ্ববর্ত্তিনী; কৃত্তিকা স্বর্ণ-খচিত “নীলাম্বর” পরিয়াছিলেন, তাঁহার হস্তের শঙ্খবলয়ে চন্দ্রকান্তমণি নিবদ্ধ ছিল। চন্দ্রের প্রিয়-মহিষীর কণ্ঠে নীলমণির কণ্ঠী, তাঁহার কাঁচলীতে বিশ্বকর্ম্মা সপ্তবিংশ ভার্য্যা সহ চন্দ্রদেবের উজ্জ্বল চিত্র আঁকিয়া দিয়াছিলেন। রোহিণীর বাম অঙ্গে দক্ষিণ বাহু স্থাপন করিয়া কৃত্তিকা। তাঁহার রক্তপট্টবাসের প্রান্তভাগে শুভ্র মণিময় চিত্র অঙ্কিত; মস্তকে চন্দ্রকিরণের মুকুট। পদে মণির মঞ্জীর, কিন্তু স্বাহার বস্ত্রখানি হুতাশনের জ্যোতির ন্যায়। তিনি খর্ব্বাকৃতি বিপুলনিতম্বা। তাঁহার কেশরাজি একটি জ্যোতিস্মান্‌ পদ্মরাগ-মণির গ্রন্থিতে আবদ্ধ। রোহিণী আসিয়া সতীর মুর্ত্তি দেখিয়া অবাক হইয়া গেল। “ভগিনী এক সিন্দুরই তোমার আয়ৎ-চিহ্ন, হস্তে রুদ্রাক্ষবলয়।” কৃত্তিকা বলিল, “ছি! বল্কল পরাইয়া এই উৎসবে পাঠাইতে শিবের লজ্জা হইল না?” স্বাহা বলিল, “ভগিণী, তোমার এমন রূপ, আহা এত বড় চুলের গোছা তৈল ও মার্জ্জনার অভাবে জটা-বদ্ধ হইয়া গিয়াছে। জঙ্গলে মুক্তা ফেলার মত শিবের ঘরে তোমায় ফেলা হইয়াছে। আহা একখানি পদ্মরাগমণিও কি তোমার হারে গাঁথিয়া দিতে পারিল না? ইহার মধ্যে রবির দুই স্ত্রী—ছায়া ও সংজ্ঞা তথায় উপনীত হইলেন। একজন গঙ্গাজলী রেশমীশাড়ী পরিয়া ছিলেন। কষ্টি পাথরে বাঁধা-ঘাটের ন্যায় সেই শাড়ীর উজ্জ্বল কৃষ্ণ পাড় ঝলমল করিতেছিল। তাঁহার উত্তরীয়াঞ্চলে স্বর্ণবিন্দু দীপ্তি পাইতেছিল। সংজ্ঞার মূর্ত্তি দীর্ঘ ও গৌরবদীপ্ত। একখানি অয়স্কান্ত মণির চূর্ণে রচিত নীলাভ্র বর্ণের বস্ত্র পরিয়া তিনি রূপের হিল্লোল তুলিয়াছিলেন। শচীর বাগান হইতে সংগৃহীত একটি মন্দারকুসুমের মালা তিনি কণ্ঠে পরিয়াছিলেন। ছায়া আসিয়া বলিল,

৩২