পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৩৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সতী

করিতে সম্মত হইয়া এই শিশুরূপে অবতীর্ণ হইয়াছেন? দত্তের পিতা একশত বৎসর একপদে দণ্ডায়মান হইয়া ভগবানের তপস্যা করিয়াছিলেন, তিনি এই একশত বৎসর শুধু বায়ু সেবন করিয়াছিলেন। তাঁহারই প্রার্থনায় ভগবান আমাদিগকে কৃপা করিয়াছেন।” এই বলিয়া অনসূয়া একখানি প্রস্তরের উপর উপবেশন করিলেন। দত্তাত্রেয় তাঁহার অঞ্চল ধরিয়া জানুর সম্মুখে বসিয়া রহিলেন। সেই দ্বি-প্রহরের সৌরকিরণ মন্দীভূত তেজে শিশুর কুঞ্চিত জটাকলাপ স্পর্শ করিতে লাগিল। সতী তাহার রূপ দেখিয়া বিমল আনন্দলাভ করিলেন। অনসূয়া বলিলেন, “এই বাড়ীর স্ত্রীলোকেরা বলাবলি করিতেছিলেন—শিবালয়ে তুমি বড় কষ্টে থাক।” সতী উত্তর করিলেন, “আপনার কি মনে হয়? কৈলাসপুরীর সুখের কথা কি বলিব। সেখানে জগতের সমস্ত সাধ যোগিবরকে দর্শনমাত্র পূর্ণ হইয়া যায়। কত দিন নিম্ব বৃক্ষমূলে দাঁড়াইয়া আমি তাঁহার ধ্যানস্থ মুর্ত্তি দেখিয়াছি। আমি ক্ষুধা-তৃষ্ণা ভুলিয়া গিয়াছি। স্ত্রীজাতির ঈপ্সিত বসন, ভূষণ, আড়ম্বর আমার নিকট তুচ্ছ বোধ হইয়াছে। তাঁহার শ্রীমুখের বাণীই আমার কর্ণের ভূষণ, তাঁহার পদসেবাই আমার হস্তের অলঙ্কার, তাঁহার মূর্ত্তিচিন্তাই আমার হৃদয়ের হার হইয়াছে। বলিব কি, তাঁহাকে দেখামাত্র চিতাভস্ম পরম পবিত্র মনে করিয়াছি, সেই বিভূতিতে যে তত্ত্ব অঙ্কিত দেখিয়াছি, জগতের কোথাও তাহা নাই। এইজন্য বিভূতি লেপিয়া যোগিনী সাজিয়াছি। তাঁহার জন্য সিদ্ধি ঘাঁটিতে ঘাঁটিতে হাতে কড়া পড়িয়াছে বলিয়া ছায়াদিদি আক্ষেপ করিলেন। এ নন্দীর কাজ হইলেও সবই আমার কাজ। তাঁহার সেবায় যে কষ্ট, তাহা যেন আমার জন্মে জন্মে পাইতে হয়, এই কড়াই আমার আয়ৎ-চিহ্ন।”

৩৫