পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৩৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সতী

বলিতেছিলেন, “এই সকল সাংসারিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সুখ-বিলাসে নিমজ্জিত মেয়েরা শিবের গৌরব কি করিয়া বুঝিবে? সমুদ্র মন্থনের সময় কত বহুমূল্য রত্ন উত্থিত হইয়াছিল—সমস্ত দেবতারা তাহা লুটিয়া লইলেন। কৌস্তুভ-মণি লক্ষ্মী বিষ্ণুর ভাগে পড়িল, পারিজাত-তরু, উচ্চৈঃস্রবা ও ঐরাবত ইন্দ্র গ্রহণ করিলেন; অপরাপর দেবতারা অমৃতের ভাগ পাইয়া অমর হইলেন। শিব একবারে নিশ্চেষ্ট ও উদাসীন, কিন্তু যখন দ্বিতীয়বারের মন্থনে ক্লিষ্টকর্ম্ম দেবাসুরের অত্যধিক শ্রম জনিত নিঃশ্বাসে বিষ-প্রবাহ উত্থিত হইয়া সমস্ত জগৎ ধ্বংস করিতে উদ্যত হইল, তখন হতাশ উপায়হীন ও আর্ত্ত দেবমণ্ডলী সৃষ্টি রক্ষার জন্য শিবের শরণ লইলেন। জগতের এই আসন্ন ধ্বংসকালে শিব সেই বিষতরঙ্গ গণ্ডুষ করিয়া গ্রাস করিয়া ফেলিলেন, মুহূর্ত্ত কাল তাঁহার ত্রিনেত্র স্পন্দিত হইল, মুহূর্ত্ত কাল তাঁহার কর্ণস্থিত অতি শুভ্র ধুস্তূর পুষ্পদ্বয় কথঞ্চিৎ ম্লান হইল, তার পর আবার যে ধ্যানের মূর্ত্তি, তাহাই,—শুভ্র রজত-গিরিনিভ প্রসন্নবদন শিব। কিন্তু এই মহাসহিষ্ণুতা ও ত্যাগের চিহ্ন-স্বরূপ নীলকণ্ঠের কণ্ঠ নীলিমারঞ্জিত হইয়া রহিল। দেবাদিদেব একদিন আমার স্বামী অত্রিকে বলিয়াছিলেন—“যাহা অন্যের উপেক্ষিত, তাহাই আমার প্রার্থিত; সুরঞ্জিত বহুমূল্য পট্টবস্ত্র দেবতারা পরিধান করেন, কিন্তু বাঘের ছাল কেহ ঘৃণায় গ্রহণ করেন না; আমি তাহাই কুড়াইয়া লইয়াছি। অপরাপরের জন্য অগুরু চন্দন ও কস্তুরী; কিন্তু এই চিতাভস্ম—যাহা জগতের শেষ পরিণতি—তাহা কে লইবে? আমি এই চিতাভষ্ম আদর করিয়া অঙ্গে মাখাইয়া লইয়াছি। কৌস্তভ এবং অপরাপর মণিমুক্তা লইয়া দেবতার কাড়াকড়ি করেন, কিন্তু এই জটাজুটই আমার মাথার শোভা, ইহার মধ্যে গঙ্গার তরঙ্গ-ভঙ্গের মধুর রব আমার

৩৭