পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৪০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পৌরাণিকী

বড় কষ্ট, দূত পাঠাইয়া আনিতে হয়; এখানে থাকা কি আমাদের সাজে? আর আমাদের কর্ত্তাটির যদিও আমরা সাতাশ ভার্য্যা, তথাপি সব ক’টির সঙ্গে সঙ্গে থাকা চাই, তিনি বলেন, ‘ঠাট বজায় না রাখিলে মান-সন্ত্রম থাকে না’।” ইহার মধ্যে স্বাহার এক পুত্র সতীর গা ঘেঁষিয়া বলিল, “সতি মাসি! শিব মেসো কি ক’রে বাঘছাল প’রে থাকেন? মা বলছিলেন, তোমার ভাল ভাল শাড়ী ও অলঙ্কার বেচে নাকি তিনি ভাঙ্গ খেয়েছেন!” সংজ্ঞা বলিল, “দুষ্ট ছেলে, মাসীমাকে কি এ কথা বলিতে হয়?” পুনর্ব্বসু বলিল, “তা বেচারি করবে কি, স্ত্রীলোকের কপালে যা’, তা ঘুচাবে কে? সতি! তুমি মনে দুঃখ ভেব না।”

 মুক্ত ব্যোমবিহারী পক্ষীকে সহসা পিঞ্জরাবদ্ধ করিলে তাহার যেরূপ শ্বাসরোধ হইবার উপক্রম ঘটে, এই পার্থিব বৈভবের আলোচনা—তাঁহার প্রতি কটাক্ষ ও অযাচিত সহানুভূতি—এ সমস্তই সতীকে সেইরূপ তীব্রভাবে পীড়ন করিতে লাগিল। সতীর মনে হইল, দক্ষপুরী আর তাঁহার যোগ্য নাই, তাঁহার একমাত্র স্থান কৈলাস। দেবাদিদেবের আনন্দময় বদন তাঁহার কেবলই মনে পড়িতে লাগিল; সেই বদনের ধ্যান-প্রশান্তভাবে বিশ্বের হিত সঙ্কল্পিত, সেইভাবে তিনি মাতৃস্নেহ, ভগিনীর স্নিগ্ধতা, স্বামীর আদর, সমস্তই অঙ্কিত দেখিতে পাইলেন। কৈলাসপুরীর প্রতি তরুপল্লবে তিনি জন্মভূমি, নিবাসভূমি ও স্বর্গের গৌরব একাধারে অনুভব করিতে লাগিলেন। তিনি কি দেখিতে আসিয়াছিলেন, আর কি দেখিতে লাগিলেন! যতই তাঁহারা বেশভূষার সমালোচনা করিতে লাগিলেন, ততই তাঁহার বল্কল প্রিয়তর ও শ্রেষ্ঠতর বোধ হইতে লাগিল। তাঁহার প্রাণ কৈলাসের জন্য অস্থির

৪০