পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৪১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সতী

হইয়া উঠিল। আজ শিবের চরণপদ্মে তিনি জবা ও বিল্বদল প্রদান করেন নাই, তাঁহার দিনটা বৃথা ও শূন্য বলিয়া বোধ হইল। আকাশপানে তাকাইয়া দেখেন, মুক্ত অম্বর যেন দিগম্বরের দিক্‌বাসের ন্যায় প্রসারিত, উৎসবের নানা বাদ্যরব অতিক্রম করিয়া তিনি পিনাকপাণির ডমরু-নিনাদ শুনিতে পাইলেন। তাঁহাদের কৃপা তাঁহার অসহ্য হইল, তিনি অতি সামান্যরূপে আহার করিয়া প্রসূতির নিকট আসিয়া কাঁদিয়া বলিলেন, “মা, আমি তোমাকে দেখিবার জন্য আসিয়াছিলাম, একবার পিতাকে ডাকাইয়া আন, তাঁহাকে প্রণাম করিয়া কৈলাসপুরীতে চলিয়া যাই। আমার মন বড় ব্যাকুল হইয়াছে।”

 প্রসূতি বলিলেন, “সে কি! যজ্ঞ দেখিতে আসিলে, যজ্ঞ শেষ না হইতেই চলিয়া যাইবে? একি পাগলের কথা!”

 সতী বলেলেন, “কেন বলিতে পারি না—যজ্ঞের ধূম আমাকে ব্যথিত করিতেছে, যজ্ঞের মন্ত্রের শব্দ অসিদ্ধ ও অপূর্ণ বলিয়া মনে হইতেছে। বেদী-পার্শ্বস্থ ব্রাহ্মণগণের কোলাহল অপবিত্র বোধ হইতেছে; আমি বলিতে পারি না, কেন এই যজ্ঞ আমার প্রীতি আকর্ষণ করিতেছে না। যজ্ঞেশ্বর বিষ্ণু ত এই যজ্ঞ অনুমোদন করিয়াছেন?”

 প্রসূতি বুঝিলেন, শিবানীকে না বলিলেও, এ যজ্ঞ যে শিবহীন, তাহা সাধ্বী মনে মনে বুঝিতে পারিয়াছেন। প্রকাশ্যে বলিলেন, “সিংহটা চলিতে বড় দোলে, তাহার পৃষ্ঠে এতটা পথ আসিয়া তোমার মাথাটা ঘুরিতেছে, এজন্য কিছু ভাল লাগিতেছে না, তুমি খাইতে পার নাই, দুই এক দিন আরামে থাকিলে সুস্থ হইবে। যজ্ঞেশ্বর অনুমোদন না করিলে কি কোন যজ্ঞের আরম্ভ হইতে পারে?” দক্ষ কোমলহৃদয়া সতীকে পাছে কোন প্রকার অপমানসূচক কথা বলেন, এজন্য

৪১