পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৪৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পৌরাণিকী

ধিক্কার দিতে লাগিলেন। দেবতাদের মধ্যেও অনেকে প্রকাশ্যভাবে কিছু বলিতে সাহসী না হইলেও দক্ষের প্রবল শক্তিতে আশ্বস্ত হইয়া নিশ্চিন্ত মনে দক্ষের নিন্দাবাদ শুনিতে কৌতুহল প্রদর্শন করিতে লাগিলেন।

 দেবী আর শুনিতে পারিলেন না। শিবনিন্দা শুনিতে শুনিতে কর্ণের শক্তি চলিয়া গেল, সেই নিন্দা উচ্চারণকালে পিতৃমুখের ভ্রূকুটি দেখিতে দেখিতে তাঁহার দর্শনশক্তি তিরোহিত হইল। সেই শিবহীন যজ্ঞভূমিতে দাঁড়াইয়া পদদ্বয় নিশ্চল হইয়া গেল, হোমাগ্নির অশিব দ্যুতি-স্পর্শে প্রাণের স্পন্দন রুদ্ধ হইতে উদ্যত হইল। শিবনিন্দকের দেহ হইতে তিনি জাত হইয়াছেন, এই ঘৃণায় সেইস্থলে চিতার ন্যায় অগ্নি জ্বলিয়া উঠিল, সেই অগ্নি তাঁহার কটিবিলম্বিত বল্কলাগ্র লেহন করিয়া প্রজ্বলিত হইল। বাহ্যজ্ঞান রুদ্ধ করিয়া মহাদেবী যোগবলে দেহত্যাগে সংকল্পারূঢ় হইলেন। তাঁহার মহিমাম্বিত মূর্ত্তি দ্বিগুণ প্রখর হইয়া উঠিল। পিতৃরক্ত যে ধমনীতে প্রবাহিত, সেই ধমনী যোগপ্রভাবে রুদ্ধ করিয়া মহাযোগিনীর বেশে তিনি নিশ্চল চিত্রপটের ন্যায় স্থির রহিলেন। নির্ব্বাণকালে দীপশিখার ন্যায় যোগিনীর অঙ্গরাগ অধিকতর সমুজ্জ্বল হইয়া উঠিল। দেখিতে দেখিতে সান্ধ্যগগনের শোভার ন্যায় একটি মৃদু প্রভা সেইস্থানে বিকীর্ণ হইয়া ধূমময় জ্যোতিঃশিখায় পর্য্যবসিত হইয়া গেল—সেই জ্যোতিঃশিখা দক্ষপুরী ছাড়িয়া চলিয়া গেল। ক্ষণ পরে দেখা গেল, সতীর মৃতদেহ সেই স্থানেই পড়িয়া আছে। মহাদেব সেই চিহ্ন দেখিবেন এজন্য তাহা দগ্ধ হয় নাই।

 নন্দিকেশ্বর সেই সভার পশ্চাতে দাঁড়াইয়াছিল, সে সতীর সঙ্গে সঙ্গে

৪৬