পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৫৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সতী

রুদ্রত্ব উপস্থিত হইয়া থাকে। এখন ভগবন্‌! একবার স্বচক্ষে যজ্ঞশালা দেখিয়া আসুন, কাঞ্চনপ্রতিমা সতী যজ্ঞকুণ্ডের পার্শ্বে পড়িয়া আছেন, একবার সেই চিত্রখানি দেখুন।”

 মহাদেব সতীর নাম শুনিয়া একটি দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিলেন, কৈলাসের সমস্ত তরুর ফুল সেই নিশ্বাসে শুকাইয়া গেল।

 সতীর অবস্থা দেখিবার জন্য ভোলানাথ বিষ্ণু ও ব্রহ্মার সঙ্গে সেই যজ্ঞশালায় উপস্থিত হইলেন। দেখিলেন, যজ্ঞস্থলী রণস্থলীর ন্যায় বীভৎস-দর্শন হইয়াছে। দক্ষের মুণ্ড ও শরীর পৃথক্‌ হইয়াছে, ঋষিগণ দারুণ প্রহারে রক্তাক্তদেহে মূর্চ্ছিত হইয়া আছেন—হোমানলে রক্ত পুড়িয়া দুর্গন্ধ হইয়াছে, অন্তঃপুরে হাহাকার উঠিয়াছে। নন্দী চীৎকার করিয়া মা’ মা’ বলিয়া কাঁদিতেছে ও বীরভদ্র, চণ্ডেশ প্রভৃতি শিবসহচরগণ যজ্ঞধ্বংস করিয়া রোষকষায়িত নেত্রে বসিয়া আছে। আর দেখিলেন, বেদী হইতে একটু দূরে সতীর দেহ ভূতলে পড়িয়া আছে। বিদায়কালে যে জবাটি তাঁহার কেশপাশে লগ্ন ছিল, তাহা ঠিক সেইরূপই আছে। বল্কলবাস ত্রস্ত হইয়া জানুর উপর আকুঞ্চিত হইয়া আছে। দেহের বিভূতির সঙ্গে যজ্ঞের ভস্ম মিশিয়া গিয়াছে, রুদ্রাক্ষের হার ছিঁড়িয়া গিয়াছে, একটি রুদ্রাক্ষ কণ্ঠের নিকট গড়াইয়া পড়িয়াছে—আর সতী শিবের সৌগন্ধিক বনে কর্ণিকার ও স্থলপদ্মের সন্ধানে যাইবেন না! শিব ত্রিনেত্র বিস্তারিত করিয়া সাধ্বীর সেই মূর্ত্তি অবলোকন করিলেন।

 তাঁহার কোন ক্রোধ হইল না, যজ্ঞাগারে নিহত ব্যক্তিগণ তাঁহার বরে বাঁচিয়া উঠিল। দাম্ভিক দক্ষের শিক্ষার জন্য তাঁহার ছাগমুণ্ড হইল! সেই স্থানে যজ্ঞেশ্বর হরি স্বয়ং সেই যজ্ঞের পূর্ণাহুতি প্রদান

৫৩