পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৫৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পৌরাণিকী

উদ্‌গ্রীব হইয়া শিবের থলিয়াতে ধুস্তূর ফল আছে কি না তাহাই পরীক্ষা করিতেছেন, কখনও মৃদু মনোরম বাক্যে শিবের কর্ণে অমৃত-নিষেক করিয়া পার্ব্বত্যোৎসবে মিলিত হইবার জন্য নন্দীর নিমিত্ত এক দিনের বিদায় প্রার্থনা করিতেছেন।

 শিব নৃত্য করিতে করিতে চলিয়া যাইতেছেন, পাহাড় নদী সরিয়া যাইয়া তাঁহার পথ করিয়া দিতেছে। শিব সতীর স্পর্শে বিরহব্যথা ভুলিয়া গিয়াছেন, অপূর্ব্ব মিলনানন্দে মাতোয়ারা হইয়া পড়িতেছেন। শিব দেখিলেন, সতীর স্পর্শ তাঁহার বাহু-বল, সতীর প্রেম তাঁহার যোগবল, সতীর সৌন্দর্য্য তাঁহার ত্রিনেত্রের বিলাস—আকাশের মেঘমালায় সতীর কেশপাশ মুক্ত, সমুদ্রের তরঙ্গ-ভঙ্গে সতীর বল্কলবসনের ভঙ্গী, পর্ব্বতের গাত্রে সতী বল্লরীরূপে, পুষ্পরূপে নয়নাভিরাম।

 এই জগৎ তিনি আপনার ও সতীর প্রকাশ বলিয়া বুঝিলেন; তিনি নিশ্চেষ্ট, অচল—সতী ক্রীড়াশীল, গতিময়ী ও তাঁহাকে কার্য্যের প্রেরণা দিতেছেন। তাঁহার রূপ নাই, গুণ নাই, তিনি অক্ষয়, অদ্বিতীয়। সতী রূপবতী, গুণবতী, তাঁহাকে নিরন্তর মুগ্ধ রাখিতে শক্তিশালিনী। সতীই তাঁহার সুখ—সতীই তাঁহার দুঃখ। সতীকে বাদ দিলে ত্রিজগতের সঙ্গে তিনি সম্বন্ধরহিত হইয় পড়েন, অপর দুই চক্ষু দৃষ্টিহারা হইয়া পড়ে,—কেবল ললাটের নেত্র কোন ঊর্দ্ধ রাজ্যে লক্ষ্যবদ্ধ হইয়া নিশ্চল হইয়া যায়। ত্রিজগৎ তাহার কোন সন্ধান বলিতে পারে না।

 এই আনন্দে বিহ্বল, প্রিয়তমাস্পর্শ-সুখে উন্মত্ত শিব নৃত্য করিয়া চলিতেছেন। যুগ যুগ চলিয়া গেল এই নৃত্য—এই পর্য্যটনের বিরাম নাই। যোগী ভোগী হইয়া পড়িলেন, শিব মায়াযুক্ত হইলেন। জগৎ আবার অকল্যাণ গণনা করিল।

৫৬