পাতা:সবুজ পত্র (চতুর্থ বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৬৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ওখ বর্ষ, একাদশ সংখ্যা জাতীয় জীবনে সাহিত্যের উপযোগীতা (9) ভাষ্কর তার যে মানসী মূৰ্ত্তি পাথর খুদে বের করলেন, তার দিকে আমরা যখন চাই, পাথরটাই কি তার ভিতর আমাদের কাছে সত্যবস্তু বলে মনে হয়, না . ভাস্করের কল্পনাই সেখানে সত্যরূপ ধারণ করে ? স্ত্রী-পুরুষের যে প্ৰণয়, তার মুলে যাই থাক, বর্তমানে তার শোভা-সৌন্দৰ্য্য, ঐশ্বৰ্য্য-সম্পদ মানুষের মনের ক্রিয়ারই ফল। মুলে যার সৌন্দৰ্য্যের অভাব তাকে সুন্দর শোভন করে তুলবে, এ সামর্থ্য সাহিত্যের আছে। আমাদের ভিতর যেটা কুৎসিৎ, সেটাকে শ্ৰীযুক্ত করবার ভার সাহিত্যের উপরই ন্যস্ত। কারণ সাহিত্যের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ইহলোকের মালমসলা নিয়েই আর একটি কল্পলোকের সৃষ্টি করা।--যে লোক এই মাটির পৃথিবীর চাইতে ঢের বেশী সুন্দর চেয় বেশী স্বত্য এবং ঢের বেশী অক্ষয় । সাহিত্য ব্যক্তির মনকে যে ঐশ্বৰ্য্য দান করেছে, তাতে জাতীয়মনের সৌন্দৰ্য এবং সম্পদ বেড়েছে। এরপর গোটা জাতিটার উপরে ও সাহিত্যের প্রভাব যথেষ্ট আছে । যে গণতন্ত্রীয় শাসনপ্ৰণালী, আজকের দিনে ইউরোপে প্ৰতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই ইউরোপের এমন দিন ছিল, যখন তার কাছে ওটি স্বপ্নের চেয়েও অলীক ছিল । দরিদ্র জনসাধারণের কাছে সে দেশের ধনী জমিদার ‘ধৰ্ম্মারুতার প্ৰবল প্রতাপান্বিতা” ছিল। মানুষের সঙ্গে মানুষের এই অস্বাভাবিক ব্যবধান, ইউরোপের সাহিত্যিকেরাই দূর করেছেন। তঁরাই সাম্যবাদের উপর গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। তারপর মধুসুদন, হেমচন্দ্ৰ, বঙ্কিমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রলাল প্রভৃতির সৃষ্ট সাহিত্য বিগত ৪০ বছরের মধ্যে আমাদের জাতীয়মনে যে পরিবর্তন উপস্থিত করেছে, তা চোখ মেলে চাইলেই দেখতে পাওয়া যায়। re.