পাতা:সবুজ পত্র (তৃতীয় বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় বর্ষ, ষষ্ঠ ও সপ্তম সংখ্যা জাপানের পত্ৰ \ტs\ხ নিমন্ত্রণ করে নিয়ে যাওয়া হয় । আস্তে অস্তে দুটো তিনটে ঘরের মধ্যে বিশ্রাম করতে করতে, শেষে আসল জায়গায় যাওয়া গেল। সমস্ত ঘরই নিস্তব্ধ, যেন চিরপ্রদোষের ছায়াবৃত-কারো মুখে কথা নেই। মনের উপর এই ছায়াঘন, নিঃশব্দ নিস্তব্ধতার সন্মোহন ঘনিয়ে উঠতে থাকে। অবশেষে ধীরে ধীরে গৃহস্বামী এসে নমস্কারের দ্বারা আমাদের অভ্যর্থনা করলেন। ঘরগুলিতে আসবাব নেই বল্লেই হয়, অথচ মনে হয় যেন এ সমস্ত ঘর কি-একটাতে পূৰ্ণ, গমৃগম করচে। একটিমাত্ৰ ছবি কিম্বা একটি, মাত্র পাত্র কোথাও আছে। নিমন্ত্রিতেরা সেইটি বহু যত্নে দেখে দেখে নীরবে তৃপ্তিলাভ করেন। যে জিনিস। যথার্থ সুন্দর, তার চারিদিকে মস্ত একটি বিরলতার অবকাশ থাকা চাই। ভালো জিনিসগুলিকে ঘেঁষাৰ্ঘেষি করে রাখা তাদের অপমান করা-সে যেন সতী স্ত্রীকে সতীনের ঘর করতে দেওয়ার মত। ক্ৰমে ক্ৰমে অপেক্ষা করে করে, স্তদ্ধতা ও নিঃশব্দতার দ্বারা মনের ক্ষুধাকে জাগ্রত করে তুলে, তার পরে এইরকম দুটি একটি ভালো জিনিস দেখালে, সে যে কি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, এখানে এসে তা স্পষ্ট বুঝতে পারলুম। আমার মনে পড়ল, শান্তিনিকেতন আশ্রমে যখন আমি এক-একদিন এক-একটি গান তৈরী করে সকলকে শোনাতুম, তখন সকলেরই কাছে সেই গান তার হৃদয় সম্পূর্ণ উদঘাটিত করে দিত। অথচ সেই সব গানকেই তোড়া বেঁধে কলকাতায় এনে যখন বান্ধব-সভায় ধরেচি, তখন তারা আপনার যথার্থ শ্ৰীকে আবৃত করে রেখেচে । তার মানেই কলকাতার বাড়ীতে গানের চারদিকে ফঁাকা নেই। -সমস্ত লোকজন বারবাড়ী, কাজকৰ্ম্ম, গোলমাল, তার ঘাড়ের উপর গিয়ে পড়েছে।