পাতা:সবুজ পত্র (তৃতীয় বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৬৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সবুজ পত্ৰ थंन, १७२७ وهو মানুষ চৰ্ম্মচক্ষে দূরের কথা, কেহ কখনও মানস-নেত্রেও দেখেন নাই। পৃথিবীর কবি ও কল্পনাকুশল লোকের যে-সকল মহাপুরুষ ও অতিমানুষের আদর্শ-চিত্ৰ আঁকিয়াছেন, সে সকলের কোনটাই একাধারে সর্বশক্তিসম্পন্ন অসম্ভব মানুষের চিত্র নয়। সেগুলির কোনটীতে দেখিতে পাই বহু-শক্তির একত্র সমাবেশ, কোনটীতে বা দু-একটী বৃত্তির অতিমাত্রায় বিকাশ ; কিন্তু তাহার প্রতিটিই রক্তমাংসের মানুষেরই চিত্র। দ্বিতীয় কথা এই যে, সকল শক্তির পূর্ণ অভিব্যক্তি দূরে থাক— দুই চারিটী শক্তির একসঙ্গে একটু অসাধারণরকম স্মৃৰ্ত্তির পরিচয় যাহার শরীরে আছে, এমন লোক হাজারে একজন মেলা কঠিন ; অথচ শিক্ষা যে সকলের জন্যই প্ৰয়োজন, এ সম্বন্ধৈ কোনও মতভেদ নাই । তপস্বী বাল্মীকি যখন নারদকে বীৰ্য্যবান, ধৰ্ম্মজ্ঞ, বিদ্বান প্ৰভৃতি নানা গুণসম্পন্ন ব্যক্তির কথা জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, তখন ত্ৰিলোকজ্ঞ নারদ সেই ত্ৰেতাযুগেও ইক্ষুকুবংশপ্রভাব রামচন্দ্ৰ ব্যতীত আর কাহারও নাম করিতে পারেন নাই। এবং কোনও বিশেষ শিক্ষাপ্ৰণালীর ফলে রামচন্দ্ৰ যে এই সকল গুণের আধার হইয়াছিলেন, এমন কথা নারদ ও বাল্মীকিকে বলেন নাই, বাল্মীকিও আমাদিগকে বলিয়া যান নাই। তৃতীয় কথা এই যে, যদি প্রকৃতই আদর্শ মানব বা অতিমানুষ গড়া শিক্ষার উদ্দেশ্য হইত এবং এই উদ্দেশ্য সফল হইবার কোনও সম্ভাবনা থাকিত, তাহা হইলে এইরূপ শিক্ষার ফলে পৃথিবীটা মানুষের পক্ষে বাসের উপযুক্ত থাকিত কিনা, সন্দেহ করিবার যথেষ্ট কারণ আছে। যে সমাজবন্ধনের ভিত্তির উপর মানুষের সভ্যতার ইমারত গঠিত হইয়াছে, তাহার মূল এই যে, মানুষে মানুষে শক্তির প্রভেদ আছে, এবং সে প্ৰভেদ কোনও শিক্ষার সাহায্যে সম্পূর্ণ লোপ করা যায় না।