১১২ সবুজ পত্র জ্যৈষ্ঠ, ১৩২৫ দর্শন, সংস্কৃত দর্শন সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ পদার্থ, এবং অলঙ্কার শাস্ত্রে সে গুণের নাম হচ্ছে প্রসাদ গুণ। বলা বাহুল্য স্বচ্ছতা হচ্ছে আটের সৃষ্টি। পৃথিবীর সকল জিনিষই অপরিষ্কার, মানুষ নিজের মন ও নিজের হাত এই দুয়ের সহযােগে যা অপরিষ্কার তা পরিষ্কার করে নেয়—সেই পরিষ্কৃত পদার্থের নামই স্বচ্ছ। কিন্তু চিন্তার ধারা স্বচ্ছ হলেই যে গভীর হতে হবে এমন কোনই কথা নেই। বরং সচরাচর দেখতে পাই লােকের বিশ্বাস যে, যে-বস্তু যত ঘােলা তা তত গভীর। মানুষে হেগেলের চিন্তাকে যে এত গভীর মনে করে, তার প্রধান কারণ সে চিন্তার ধারা আগাগােড়া কাদাগেল। যে মনােভাব থেকে মানুষে রঙকে স্বচ্ছ করে, সেই একই মনােভাব থেকে মানুষে রেখাকে সরল করে। সুতরাং রচনার ভিতর যেখানে স্বচ্ছতা আছে সেখানে ঋজুতার সাক্ষাৎ পাবার আশা করা যায়। এ বিষয়ে আমাদের নিরাশ করেন না। তার মনও জ্যামিতির ছাঁচে ঢালা। তাঁর চিন্তা একটা সরল রেখা ধরে চলে বলে তার সঙ্গে সঙ্গে চলা এত সহজ। এ চলার যা আনন্দ সে হচ্ছে পুরােপুরি আর্ট উপভােগ করবার আনন্দ। তাঁর অনুগামী হয়ে আমরা কি ইন্দ্রিয়- গ্রাহ কি অতীন্দ্রিয় কোনরূপ জ্ঞানের পথে কিছুমাত্র অগ্রসর হইনে। প্রথমত তিনি এই বহুরূপী বিশ্বকে মায়া বলে, অর্থাৎ তার রূপ বাদ দিয়ে জিনিসটিকে বেজায় স্বচ্ছ করে নিয়েছেন। তারপর তার যুক্তি একটা সরলরেখা ধরে শেষটা এমন একটা জায়গায় গিয়ে পৌঁছায় যার স্থিতি আছে অথচ ব্যাপ্তি নেই অর্থাৎ বিন্দুতে শঙ্করভাষ্যের প্রধান গুণ যে তার আর্ট, তার প্রমাণ পাওয়া যায় সে ভাষের সঙ্গে উপনিষদের তুলনা কলে। উপনিষদে যা আছে সে হচ্ছে নিছক poetry, অর্থাৎ তার
পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১১৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।