পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা পত্র ভাল” হিসেবে গ্রাহ। খাঁটি কথা এই যে, ফরাসীদের প্রতি আমার ভক্তি নেই—প্রীতি আছে, তার কারণ ফরাসীরা দেবতা নয় মানুষ। মানুষের পক্ষে মানুষ হওয়ার চাইতে আর বড় কৃতীত্ব নেই, কেননা তা হওয়া ভারি শক্ত। জৰ্ম্মাণরা মানুষ না হয়ে অতিমানুষ হতে গিয়েই অমানুষ হয়ে পড়েছে। সে যাই হােক, আমার কথা তুমি ভুল বুঝাে না। আমি রােমান্টিক মনােভাবকে বর্বরতা বলছি নে। ক্লাসিক মন রেখাপাত করে, রােমান্টিক মন তার অন্তরে বর্ণ বিন্যাস করে। এর প্রথমটির ভিতর দ্বিতীয়টি অনুপ্রবিষ্ট না হলে, কি সমাজ কি সাহিত্য কিছুই ঐশ্বৰ্য্য লাভ করে না। তবে এ কথা ভুললে চলবে না যে, শুধু রেখায় ছবি আঁকা যায়, শুধু রঙে যায় না। অতএব সুস্থ মনের প্রথম কাজ হচ্ছে কাঠাম গড়া ও খাড়া রাখা। সুবুদ্ধি কাঠাম তৈরি করে সুহৃদয় তার ভিতর রঙ ভরে দেয়। কিন্তু যে হৃদয়াবেগ আর্টের হাতে গড়া সুঠাম কাঠাম ভেঙ্গে ফেলতে চায়, সেই হৃদয়াবেগই বর্বর, কেননা তা অন্ধ। আজকের দিনে জম্মাণির জাতীয়-আত্মা রূপান্ধার এত প্রবল প্রমাণ দিচ্ছে যে, সে আত্মাকে আর্টিষ্টিক অর্থাৎ সভ্য বলা অসম্ভব। রােমান্টিক আত্মা বিপথে গেলেই তা মারাত্মক হয়ে দাড়ায়—আর ও মনােভাবের উদ্ভান্ত হবার দিকে একটা সহজ প্রবণতা আছে। রােমান্টিক আত্মার ছােটবার খােলা রাস্তা হচ্ছে, উপরের দিকে—আশে পাশে নয়। তার চোখ আকাশ ছেড়ে মাটির উপর পড়লেই সে স্থলে আগুন জ্বলে। সে যাই হােক, আমার জ্যামি, তিক বন্ধু বলেন যে, ইউক্লিডের জ্ঞান থাকলে জৰ্মাণৰ সমস্ত পৃথিবীকে জর্মাণীর অন্তর্ভুত করবার চেষ্টা করুত না, কেননা ও চেষ্টা হচ্ছে একটা বিরাট বৃত্তকে একটা ক্ষুদ্র চতুষ্কোণের মধ্যে অন্তর্নিবিষ্ট করবার চেষ্টা।