পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা রবীন্দ্রনাথের পত্র ১১৯ বিশ্রাম করতে দিচ্ছে না। আমার ভারতবর্ষীয় শান্ত প্রকৃতিকে য়ুরােপের চাঞ্চল্য সর্বদা আঘাত করচে-সেইজন্যে একদিকে বেদনা আর একদিকে বৈরাগ্য । একদিকে কবিতা আর একদিকে ফিলজফি। একদিকে দেশের প্রতি ভালবাসা আর একদিকে দেশ- হিতৈষিতার প্রতি উপহাস। একদিকে কর্মের প্রতি আসক্তি আর একদিকে চিন্তার প্রতি আকর্ষণ। এইজন্যে সবশুদ্ধ জড়িয়ে একটা নিষ্ফলতা এবং ঔদাস্য। এটা তােমার কি রকম মনে হয় ? তুমি কি ভাবে দেখ সেটা আমাকে একটু পরিষ্কার করে লিখাে-তােমাদের দ্বারা আমার নিজেকে Objectively দেখতে ইচ্ছে করে। নিজের মধ্যে নিজেকে দেখতে চেষ্টা করা দুরাশা—কারণ আমার প্রতিমুহূর্তই আমার নিজের কাছে এমনি জীবন্ত এবং বলবান, যে, মােটের উপরে আমি যে কি তা দেখতে পাইনে। কখনাে আশা কখনাে নৈরাশ্য কখনাে গর্ব কখনাে গ্লানি অনুভব করি কিন্তু নিজের ঠিক পরিমাণটা পাইনে। আমি যখন আমার কাব্য সমালােচনা করতে চেষ্টা করি তখন বর্তমান মুহূর্তটাই ক্রিটিক হয়ে বসেন কিন্তু তার কথা কিছুমাত্র বিশ্বাসযােগ্য নয়, তােমরা যখন সমালােচনা কর তখন আমার পূর্বের সঙ্গে পর এবং একটার সঙ্গে আরেকটা মিলিয়ে দেখতে পার। Bashkirtsef-এর Journal আমিও পড়ছি-মন্দ লাগছে না কিন্তু মােটের উপরে কষ্টকর ঠেকচে। এর থেকে মাঝে মাঝে অনেকগুলাে কথা মনে আসে—কিন্তু যেটুকু স্থান অবশিষ্ট আছে তার মধ্যে আর সে সকল উত্থাপন করা যেতে পারে না -অতএব আজ বিদায়। ২৯ জানুয়ারি ১৮৯৮। শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।