পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬ সবুজ পত্র আষাঢ়, ১৩২৫ ছেলেরা এক বৎসর দ্বার-মুক্ত ঘরে ঘুমতে অভ্যস্ত হবার ফলে, তাদের শীতগ্ৰীষ্ম সহ্য করবার শক্তি এতটা বেড়ে গেছে যে, তাদের মধ্যে অনেকে, দেশ যখন বরফে জমে যায়, সে সময়ও রাত্তিরে সখ করে মাঠের ভিতর তাবু খাটিয়ে তার নীচে শােয়, এবং তাতে তাদের নিউমােনিয়া ত বড় কথা—শ্লেষ্মও প্রকুপিত হয় না। এ একটা কম বড় শিক্ষা নয়; কেননা সকলেই জানেন যে, অকাতরে শীত গ্রীষ্ম সহ করবার শক্তির নামই তিতীক্ষা। আর যাতে করে তিতীক্ষা আমাদের অঙ্গের ভূষণ হয়, তার জন্য ত সকলেই চীৎকার করছেন। আর একটি কথা। নব-বিদ্যালয়ের ছেলেদের গ্রীষ্মকালে দিনে ঘুমতে দেওয়া হয়। সে বিদ্যালয়ের ছাত্রদের “মা দিবাং স্বপি” এ নিষেধ মেনে চলতে হয় না। তার কর্তৃপক্ষদের মতে ছেলেদের পক্ষে শুধু গ্রীষ্মকালে নয়, সকল কালেই, দিনে অন্ততঃ খানিকক্ষণের জন্য চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা নিতান্ত দরকার, নচেৎ বড় হলে তারা পুরােপুরি খাড়া হয়ে দাড়াতে পারে না। অস্থিতত্ত্ব-বিদেরা আবিষ্কার করেছেন যে, বারাে চৌদ্দ বয়েসের আগে ছেলেদের পিঠের দাড়া মজবুত হয় না, সুতরাং সে বয়েসে দিনভর দেহের বােঝা বইতে হলে তাদের মেরু- দগুটা বেঁকে যায়, নুয়ে পড়ে। অধিকাংশ লােকের পৃষ্ঠদণ্ড যে ঋজু নয়, তা সভ্যসমাজের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই নজরে পড়ে। দেহের এরূপ বঙ্কিম ভঙ্গীটা সুদৃশ্য ত নয়ই, স্বাস্থ্যকরও নয়। আমাদের পূর্ব-পুরুষেরা পৃষ্ঠদণ্ডকে ঋজু করা এতই আবশ্যক মনে করতেন যে, তার জন্য তাদের হঠযোগের সব ভীষণ প্রক্রিয়া অভ্যাস করুতে হত। সময় থাকতে দিনদুপুরে একটু শুয়ে নিলে যদি সেই সুফল লাভ করা যায়, তাহলে তা যে করা কর্তব্য এ বিষয়ে আশা করি দ্বিমত নেই 1.