পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩ সবুজ পত্র আষাঢ়, ১৩২৫ চাইতে আমাদের ভােজন করবার প্রবৃত্তি ঢের বেশী হওয়ায়, বাঙালার যুবকদের হয় মন্দাগ্নি, আর প্রৌঢ়দের বহুমুত্র। বহু লােকের দেখতে পাই একটা ধারণা আছে যে, ও দুই রােগের দ্বারা বাঙালী তার চিন্তাশীল তার পরিচয় দেয়। সে ধারণা নিতান্তই ভুল। উদর ও মস্তিষ্ক এক অঙ্গ নয়, এবং এক প্রকৃতির অঙ্গ নয়। এর একটি নিরেট, আর একটি ফাঁপা ; অতএব এ দুয়ের ক্ষুধাও এক নয়, খোরাকও এক নয় । অধমটির খােরাক কম জোগালে উত্তমটির শক্তি বাড়ে। আমার বিশ্বাস এই ঔদরিকতাই আমাদের সকল দুর্বলতার মূল কারণ। আমরা আতকে জাত যে এতটা স্ত্রী-শাসিত-সেও ঐ পেটের দায়ে। শুনতে পাই অপর দেশের স্ত্রীলােকে পুরুষদের হৃদয় তুষ্ট করে তাদের পােষ মানায়-কিন্তু দেখতে পাই এদেশের স্ত্রীজাতি পুরুষদের উদর পুষ্ট করে তাদের বাগ মানায়। রন্ধনই এ দেশে দাম্পত্যের প্রধান বন্ধন। এই সব কারণে, আমার মতে সর্বপ্রথমে আমাদের আহার- বিজ্ঞানের চর্চা করা দরকার; এবং এ শিক্ষা স্কুল থেকে শুরু হওয়াই কৰ্ত্তব্য। বাল্যকালে অপরিমিত আহার করলে, যৌবনে দুষ্ট ক্ষুধাকে আর শিষ্ট করা যায় না। দেশভেদে জাতির খাদ্যাখাদ্যের ভেদ হয়। সুতরাং বেলজিয়ামের স্কুলের আহারের ব্যবস্থা আমাদের স্কুলে নাও চলতে পারে; তবে আমরা যখন সৰ্ব্বভূক, তখন এই কথাটা আমাদের জানা দরকার যে, নব- বিদ্যালয়ে ছেলেদের মাংসভক্ষণ নিষেধ। এ স্কুলে দুধ ঘি আটা, ফল মূল ও শাক সবজিই ছেলেদের প্রধান আহার।