পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা হ-ই-বার ছিল আর এই ঝোঁকটার জন্যে যদি কাউকে দায়ী করতে পারা যায় ত সে আমাদের গ্রাম্য-ইংরেজী স্কুলের নব্য-হেডমাষ্টার মশাই রমেশ বাবুকে। তিনি উক্ত জিনিসটার উপর কেন যে এত খড়গহস্ত ছিলেন তা তিনিই জানতেন, তবে এর অপকারিতা সম্বন্ধে তিনি যে সব কথা বলতেন তা থেকে এইটুকু বােঝা যেতাে যে তার মতে ওজিনিসটা মানুষের স্বাধীনতার মুলে খুব জবর গােচের একটা ঘা দেয় আর সেই ঘা মানুষের পা দুটোকে একবারে জন্মের মত খোড়া করে দেয় তার চলবার শক্তি একবারে বন্ধ হয়ে যায়। কথাটা আর কারুর মনের উপর ছাপ কাটতে পেরিছিল কিনা জানি না তবে আমার মনের উপর যে একবারে কোদাই কেটে দিয়ে ছিল সে কথা জোর করেই বলতে পারি। যখন নিজের স্বাধীনতাকে বাঁচাবার জন্যে তার চারিদিকে নানারূপ সংকল্পের পরিখা ও প্রাকার তৈরি করছি সেই সময় দিগ্বিজয়ী বীরের মত মা তার সমস্ত ব্ৰহ্মাস্ত্র সঙ্গে নিয়ে একবারে সিংহদ্বারের সুমুখে এসে হাজির। এই কথা নিয়ে মার সঙ্গে প্রায়ই আমার গােল বাধতাে কিন্তু এ পৰ্যন্ত কোন পক্ষই ডিক্রী পায় নি। সেদিনও মার সঙ্গে আমার ঐ একই কথা নিয়ে তর্ক বিতর্ক চলছিল মাঝখানে হঠাৎ আমি বলে উঠলুম, “দেখ মা, আমি যখন বলেছি বিয়ে করব না তখন কখনই করব না তা তুমি কাঁদ কাট আর যাই করনা কেন।” এই ব্যাপারের কিছুদিন পর একদিন বৈকালে বাইরে বেরুবার জন্যে কাপড় ছাড়ছি এমন সময় বাবা এসে হাজির-“দেখ নিরু আজ আর বাইরে বেরিয়ে কাজ নেই হরকালি বাবুরা তােমাকে আশীর্বাদ করতে আসবেন।”