পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৪ সবুজ পত্র আষাঢ়, ১৩২৫ হাত-পাখাটার বাতাস খেতে খেতে হঠাৎ আমার চোখ পড়ে যায় উপরেতে, মরচে-পড়া গরাদে ঐ, ভাঙা জালাখানি, বসে আছে পাশের বাড়ির কালাে-মেয়ে নন্দরাণী। মনে হয় যে রােদের পরে বৃষ্টিভরা থমকে-যাওয়া মেঘে ক্লান্ত পরাণ জুড়িয়ে গেল কালো পরশ লেগে। আমি যে ওর হৃদয়খানি চোখের পরে স্পষ্ট দেখি আঁকা ; ও যেন জুই ফুলের বাগান সন্ধাছায়ায় ঢাকা ; একটুখানি চাদের রেখা কৃষ্ণপক্ষে স্তব্ধ নিশীথ রাতে কালো জলের গহন কিনারাতে। লাজুক ভীরু ঝরণখানি ঝিরি ঝিরি কালো পাথর বেয়ে বেয়ে লুকিয়ে ঝরে ধীরি ধরি। রাত-জাগা এক পাখী, মৃদু করুণ কাকুতি তার তারার মাঝে মিলায় থাকি থাকি। ও যেন কোন ভােরের স্বপন কান্নাভরা, ঘন ঘুমের নীলাঞ্চলের বাঁধন দিয়ে ধরা। রাখাল ছেলের সঙ্গে বসে বটের ছায়ে ছেলেবেলায় বাঁশের বাঁশি বাজিয়েছিলেম গাঁয়ে। সেই বাঁশিটির টান ছুটির দিনে হঠাৎ কেমন আকুল করুল প্রাণ। আমি ছাড়া সকল ছেলেই গেছে যে যার দেশে, একলা থাকি “মেস”-এ।