পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম বর্ষ, তৃতীয় সংখ্য সমুদ্রের ডাক একটি শুভদিন দেখে দক্ষিণা ও প্রসাদকে সঙ্গে নিয়ে মন্ত সেই আত্মীয়ের বাড়ীতে ছেলেকে রেখে তার নির্জন কুটীরখানিতে ফিরে এল। পৃথিবীর বুকে পুরােপণ দাগ মিশিয়ে নতুন দাগ বসিয়ে দশ বছর কেটে গেল। শ্ৰীমন্ত যখন একদিন দক্ষিণ ও প্রসাদকে সেই আত্মী- য়ের বাড়ী থেকে ফিরিয়ে আনতে গেল তখন প্রসাদের ছেলেবেলার খেয়ালের কথা সবাই ভুলেছে—ভােলে নি শুধু দক্ষিণা। তাই দক্ষিণা যখন শ্ৰীমন্তকে সে-কথা স্মরণ করিয়ে দিল—তখন দক্ষিণ যে নিতান্তই একটা পাগলী সেই কথাটাই শ্ৰীমন্ত তাকে বুঝিয়ে দিল। আরও বুঝিয়ে দিল যে শ্ৰীমন্তের এখন বয়েস হয়েছে—কবে পর- পারের ডাক আসবে তার ঠিক নেই–প্রসাদকে পৈতৃক ব্যবসাটা ত শিখতে হবে-খাওয়া পরার উপায়টা ত করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই শুভদিন দেখে প্রসাদ ও দক্ষিণা শ্ৰীমন্তের সঙ্গে আবার তাদের সমুদ্রের ধারে কুঁড়ে ঘরটিতে ফিরে এল। দক্ষিণা দুষ্ট হয়ে দেখল যে সমুদ্র দেখে প্রসাদের কোনই ভাবান্তর হল না। তিন মাসের মধ্যে মন্তের শিক্ষায় প্রসাদ একজন পাকা মাঝি হয়ে উঠল—জাল টানতে, ঈড় ফেলতে, পাল খাটাতে প্রসাদের সমকক্ষ আর কেউই সেই ধীবরপল্লীতে রইল না। সেদিন বৈশাখী পূর্ণিমা। রাত্রির এমন রূপ আর কেউ কখনও দেখেনি। লক্ষ পরী বুঝি সেদিন আকাশপথে তাদের প্রিয়ের উদ্দেশে অভিসারে বেরিয়েছিল—আর তাদের লক্ষ গা থেকে বুঝি রূপাের স্বচ্ছ তরল রাগ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল—তাদের লক্ষ হৃদয়ের প্রেমের অনুভব বুঝি আকাশে বাতাসে পৃথিবীর জলে স্থলে বিছিয়ে