পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Se সবুজ পত্র আষাঢ়, ১৩২ যাচ্ছিল—তাদের দু’লক্ষ পায়ের নুপুরের “যে-গান কানে যায় না শােনা”—তাই বুঝি দিগন্তের গায়ে গায়ে মাতলামি করে ফিরছিল। সেদিন রাত্রির খাওয়া দাওয়া শেষ করে যখন প্রসাদের কাঁধে ভাল চাপিয়ে আপনার কাঁধে দাড়, পাল ও পাল তুলবার খুঁটিটা নিয়ে শ্ৰীমন্ত গৃহ থেকে বের হল তখন পূর্ণিমার পূর্ণ চাদ আকাশে অনেক খানি উঠে গেছে। তারা দুজনে সমুদ্রের কিনারে এসে তাদের তিন খণ্ড লম্বা পুরু তক্তায় বাঁধা ভেলাটা ডাঙ্গা থেকে জলে নামিয়ে দিল। তারপর পাল খাটাবার খুঁটিটা ঠিক জায়গায় বসিয়ে দিয়ে পাল খাটিয়ে দিল-ভেলা অনুকূল-বাতাসে ততরিয়ে দিগন্তের পানে যেন উড়ে গেল—ভেলার পিছন দিকটায় প্রসাদ বৈঠা হাতে তার মাথা ঠিক রাখতে লাগল আর তার আগায় বসে শ্ৰীমন্ত জালটা গুছিয়ে রাখতে লাগল। সেদিন সাগরে রূপাের ও রূপের বান ডেকেছিল। দুধের চাইতেও সাদা পাত গায় জড়িয়ে রূপসী ঊর্মিবালারা চিকচিক ঝিক-ঝিক করছিল-খিল খিল করে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছিল। তীরের গাছগুলাে যখন ঝাপসা হয়ে এল তখন ভেলার পাল নামিয়ে নেওয়া হল। তারপর ভেলার পিছন দিকটায় বসে প্রসাদ একটু একটু করে বৈঠা মারতে লাগল আর গলুইয়ের কাছে স্তুপাকৃতি করা জালটা শ্ৰীমন্ত, ভাজ খুলে খুলে জলে নামিয়ে দিতে লাগল। “জানিস্ প্রসাদ, পূর্ণিমে রাত্তিরে যেমন জালে গলদা চিংড়ি পড়ে তেমন আর কখনও না। আর চাদনী রাত যদি মেঘলা মেঘলা হয় তবে কাঁকড়ার লেখাজোকা নেই। শ্ৰীমন্ত জাল ফেলতে ফেলতে