পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা সমুদ্রের ডাক ১৮৭ অজস্র ব’কে যাচ্ছিল আর প্রসাদ তাই নির্বাক হয়ে শুনে যাচ্ছিল। “জানিস রে প্রসাদ সেই যেবার আমি তাের মাকে বিয়ে করলাম- সেই সেবার যে এই খালটাতে কোথা থেকে এক পাল হাঙ্গর এসে পড়ল— “প্রসাদ প্রসাদ” প্রসাদের কানে এসে বাজল কে যেন ঠিক তার পিছন থেকে তাকে ডাকল—“প্রসাদ প্রসাদ”। প্রসাদ চমকে পিছন ফিরে চেয়ে দেখল। কই, কেউ ত নেই! প্রসাদের সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল। প্রসাদের মনে পড়ে গেল একটা বহু দিনের কথা-বহুদিনের স্বপ্ন-বহুদিনের আকাঙ্গা। দশ বছর ধরে যার ওপরে বিস্মৃতির কালাে পর্দা পড়েছিল তা এক মুহূর্তে কোথায় সব ছিন্ন ভিন্ন করে বেরিয়ে এলো মুক্ত স্পষ্ট উজ্জ্বল। প্রসাদ মন্তের দিকে ফিরে দেখল। বৃদ্ধ তেমনি আপন মনে জাল ফেলছিল আর কত কালের কত কথা বলে বলে যাচ্ছিল। “প্রসাদ প্রসাদ।” প্রসাদ ফিরে চাইল। সহস্র সহস্র তরুণীর মতাে অজস্র ঊর্মিবালার কল কল ছল ছল হাসি-ঐ যে তারাই ডাকছে-প্রসাদ প্রসাদ।” চাদের আলােয় চিকমিক করে উঠে ঐ যে তাদের তলিত তনু বিভঙ্গিত করে তাদের কমকণ্ঠে ডাকছে—“প্রসাদ প্রসাদ।” ঐ যে সহস্র কিশােরীর কলসির মতে, সহস্র রূপসীর রূপরাশির মতাে মাদকতা ছড়িয়ে দিয়ে ডাকছে—“প্রসাদ প্রসাদ।” এ তাদের কিসের আমন্ত্রণ। কোথায় নেবে তারা? সিন্ধুর কোন অতল তলে ? কোন রহস্য যবনিকার অন্তরালে ? ঐ যে তরঙ্গটি ভেলার গায়ে প্রতিহত হয়ে ফিরে গেল সে ডাকল-“প্রসাদ প্রসাদ।” ঐ যে লহরীটি বহুদুর হতে দৌড়ে এসে ভেলার কিনারে কিনারে লুটিয়ে গেল, সে ডাকল—“প্রসাদ প্রসাদ।” প্রসাদ মন্তের দিকে চেয়ে