পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সবুজ পত্র বৈশাখ, ১৩২৫ যে সর্ব প্রথমে তারা মানুষ—আর মানুষ মানুষের কাছে যা চায় সেটা সংগ্রামের মধ্যে নেই—অবজ্ঞার মধ্যে নেই—বিচ্ছেদের মধ্যে নেই, আছে সেটা প্রীতির মধ্যে মিলনের মধ্যে-শান্তির মধ্যে, মানুষের বিরােধ সে দু’দিনের—মানুষের প্রেম সে অনন্ত। যারা একদিন উদ্ধত-হৃদয়ে উন্মুক্ত কৃপান নিয়ে জয় করতে এলে তারা ধীরে ধীরে পরাজয় মানল—যারা একদিন শত্রুর বেশে জগন্মাতার বুকে তাণ্ডব নৃত্য করলে তাদেকে আর একদিন অনন্তস্নেহে অভিষিক্ত করে জগন্মাতা আপনার সন্তান করে নিলেন।

সহসা আজ সিন্ধুর কল কল ছল ছল দ্বিগুনতর হয়ে উঠল কেন? সেদিন সন্ধ্যার প্রাক্কালে হিন্দু মুসলমান বিস্মিত হয়ে দেখল পশ্চিম-দিক চক্ৰবালে পারাবার-বুক তরণীতে তরণীতে ছেয়ে গেছে। পালে পালে প্রভঞ্জনের হাওয়া তাদের, ক্ষুধার্ত শেন পক্ষীর মতো সাঁ সাঁ করে’ ছুটিয়ে চলেছে—হিমাদ্রি সমান তরঙ্গের বক্ষ বিদীর্ণ করে করে’-শুভ্র ফেন- পুঞ্জে পুঞ্জে বারিধি-হৃদয় আচ্ছাদিত করে’ করে ছুটে আসছে সহস্র তরণী তাদেরি পানে। ধীরে ধীরে কখন গােধূলী আপনার স্বর্ণাঞ্চল খানি টেনে নিয়ে দূর দিগন্তের গায়ে মিশিয়ে গেল—ধীরে ধীরে সন্ধ্যারাণী এসে দিবসের শেষরশ্মি রেখাটুকু আপনার অসিত অঞ্চলে মুছে নিলেন—তখন সেই অধলাে আধঅন্ধকারের মাঝে সহস্র তরণী এসে তটে লাগল। হিন্দু মুসলমান বিস্মিত হয়ে দেখল সেই সহস্র তরণীতে এক নবীন মনুষ—শ্বেতবর্ণনীলচক্ষু-পিঙ্গলকেশ কৌতুহলােদ্দীপ্ত তারা জিজ্ঞেস করল-“তােমরা কে?”