পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম বৰ, চতুর্থ সংখ্যা বই পড়া ( ৩ ) কাব্যচর্চা না করলে মানুষে জীবনের একটা বড় আনন্দ থেকে স্বেচ্ছায় বঞ্চিত হয়। এ আনন্দের ভাণ্ডার সর্বসাধারণের ভােগের জন্য সঞ্চিত রয়েছে। সুতরাং কোনও সভ্যজাতি কস্মিনকালে তার দিকে পিঠ ফেরায় নি—এদেশেও নয়, বিদেশেও নয়। বরং যে জাতির যত বেশী লােক যত বেশী বই পড়ে, সে জাতি যে তত সভ্য,-এমন কথা বললে বােধহয় অন্যায় কথা বলা হয় না। নিদ্রা কলহে দিন- যাপন করার চাইতে কাব্যচর্চায় কালাতিপাত করা যে প্রশংসনীয়, এমন কথা সংস্কৃতেই আছে। সংস্কৃত কবিরা সকলকেই সংসার-বিষ- বৃক্ষের অমৃততাপম ফল কাব্যামৃতের রসাস্বাদ করবার উপদেশ দিলেও সেকালে সে উপদেশ কেউ গ্রাহ্য করতেন কিনা, সে বিষয়ে অনেকের মনে সন্দেহ আছে, কিছুদিন পূর্বে আমারও ছিল। কেননা নিজের কলমের কালি, লেখকেরা যে অমৃত বলে চালিয়ে দিতে সদাই উৎসুক, তার পরিচয় একালেও পাওয়া যায়। কিন্তু একালেও আমরা যখন ও-সব কথায় ভুলিনে, তখন সেকালেও সম্ভবত কেউ ভুলতেন না, কেননা সেকালে সমজদারের সংখ্যা একালের চাইতে ঢের বেশী ছিল। কিন্তু আমি সম্প্রতি আবিষ্কার করেছি যে, হিন্দুযুগে বই পড়টা নাগরিক- দের মধ্যে একটা মস্ত বড় ফ্যাসান ছিল। এ স্থলে বলা আবশ্যক যে, “নাগরিক” বলতে সেকালে সেই শ্রেণীর জীব বােঝাত-একালে ইংরাজিতে যাকে man-about-town বলে। বাংলাভাষায় ওর কোনও নাম নেই, কেননা বাংলাদেশে ও জাত নেই। ও বালাই যে নেই, সেটা অবশ্য সুখের বিষয়।