পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স পর প্রাবণ, ১৩৫ মৃচ্ছকটিকে দেখতে পাই। ঐ নাটকের রাজশ্যালক শকারের সঙ্গে বিটের তুলনা করলেই নিরক্ষর ও বিদগ্ধ জনের প্রকৃতির তারতম্য স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়। উভয়েই সমান বিলাস-ভক্ত, কিন্তু শকার পশু আর বিট সুজন। শকারের ব্যবহার দেখলে ও কথা শুনলে তাকে অর্ধচন্দ্র দিতে হাত নিসপিস করে, অপরপক্ষে বিটের ব্যবহারের সৌজন্য, ভাষার আভিজাত্য, মনের সরসতা এত বেশী যে, তাকে সাদর সম্ভাষণ করে ঘরে এনে বসাতে ইচ্ছে যায়—দু’দণ্ড আলাপ করবার জন্য। বৈদগ্ধ্য যে একটি সামাজিক গুণ, এ কথা অস্বীকার করায় সত্যের অপলাপ করা হবে। মার্জিত রুচি, পরিষ্কৃত বুদ্ধি, সংযত ভাষা ও বিনীত ব্যবহার মানুষকে চিরকাল মুগ্ধ করে এসেছে এবং সম্ভবত চিরকাল করবে। এ সকল বস্তু সমাজকে উন্নত না হোক অলঙ্কৃত করে। এবং এ সকল ৩৭ কাব্য ও কলার চর্চা ব্যতীত রক্তমাংসের শরীরে আপনা হতে ফুটে ওঠে না। তবে এ কথা ঠিক যে, প্রাচীন সভ্যতা এ সকল গুণের যতটা মুল্য দিত, আমরা ততটা দিই নে। তার কারণ সে কালের সভ্যতা ছিল aristocratic, আর এ কালের সভ্যতা হতে চাচ্ছে democratic. সেকালে তার চাইতেন আকার,-আমরা চাই বস্তু। তারা দেখছেন মানুষের ব্যবহার, আমরা দেখতে চাই তার ভিতরটা। তারা ছিলেন রূপ ভক্ত, আমরা গুণলুব্ধ। ক্লাসিক সাহিত্যের সঙ্গে আধুনিক সাহিত্যের তুলনা করলে এ প্রভেদ সকলেরি চোখে ধরা পড়বে। এ যুগের সাহিত্যমাত্রেই রােমান্টিক, অর্থাৎ তাতে অর্টের ভাগ কম এবং আত্মার ভাগ বেশী। এর কারণ, এ যুগের কবিরা কাব্যে আত্মপ্রকাশ করেন। এ যুগের কবি জনগণের প্রতিনিধি নন মুখপাত্রও নন, সুতরাং সে কবির মন নিজের মন,-লৌকিক মনও নয়, সামাজিক