পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫বৰ, চতুর্থ সংখ্যা বই পড়া কিন্তু এ বিশ্বাস নিতান্ত অমূলক। মনােরাজ্যেও দান গ্রহণসাপেক্ষ, অথচ আমরা দাতার মুখ চেয়ে গ্রহিতার কথাটা একেবারেই ভুলে যাই। এ সত্য ভুলে না গেলে আমরা বুঝতুম যে, শিক্ষকের সার্থকতা শিক্ষা দান করায় নয়, কিন্তু ছাত্রকে তা অর্জন করতে সক্ষম করায়। শিক্ষক ছাত্রকে শিক্ষার পথ দেখিয়ে দিতে পারেন—মনােরাজ্যের ঐশ্বর্য্যের সন্ধান দিতে পারেন, তার কৌতুহল উদ্রেক করতে পারেন, তার বুদ্ধিবৃত্তিকে জাগ্রত করতে পারেন, তার জ্ঞান-পিপাসাকে জ্বলন্ত করতে পারেন-এর বেশি আর কিছু পারেন না। যিনি যথার্থ গুরু, তিনি শিষ্যের আত্মাকে উদ্বোধিত করেন এবং তার অন্তর্নিহিত সকল প্রচ্ছন্ন শক্তিকে মুক্ত এবং ব্যক্ত করে তােলেন। সেই শক্তির বলে, সে নিজের মন নিজে গড়ে তােলে, নিজের অভিমত বিদ্যা নিজে অর্জন করে। বিদ্যার সাধনা শিষ্যকে নিজে করতে হয়। গুরু উত্তরসাধক মাত্র। আমাদের স্কুল কলেজের শিক্ষার পদ্ধতি ঠিক উল্টো। সেখানে ছেলেদের বিদ্যে গেলানাে হয়, তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক। এর ফলে ছেলেরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে। একটা জানাশােনা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাপারটা পরিষ্কার করা যাক। আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশুসন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানােটাই শিশুর স্বাস্থ্যরক্ষার ও বলবৃদ্ধির সর্বপ্রধান উপায় মনে করেন। গােদুগ্ধ অবশ্য অতিশয় উপাদেয় পদার্থ, কিন্তু তার উপকারিতা যে ভােতর জীর্ণ করবার শক্তির উপর নির্ভর করে, এ জ্ঞান ও শ্রেণীর মাতৃকুলের নেই। তাদের বিশ্বাস ও বস্তু পেটে শীর্ণ হয়ে