পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা বই পড়া অর্থাৎ যারা পাস করতে পারে নি, কি চায় নি, তারাই ফ্রান্সকে রক্ষা করেছে। এর কারণ, হয় তাদের মনের বল ছিল বলে কলেরে শিক্ষা তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল ; নয় সে শিক্ষা প্রত্যাখ্যান করেছিল বলেই তাদের মনের বল বজায় ছিল। তাই এই স্কুল পালানো ছেলেদের দল থেকে, সে যুগের ফুান্সের যত কৃতকর্মা লোকের আবির্ভাব হয়েছিল। সে যুগে ফুান্সে কিরকম শিক্ষা দেওয়া হত তা আমার জানা নেই, তবুও আমি জোর করে বলতে পারি যে, এ যুগে আমাদের স্কুলকলেজে শিক্ষার যে রীতি চলছে, তার চাইতে সে শিক্ষাপদ্ধতি কখনই নিকৃষ্ট ছিল না। সকলেই জানেন যে, বিদ্যালয়ে মাষ্টার মহাশয়ের নােট দেন, এবং সেই নােট মুখস্থ করে ছেলেরা হয় পাস। এর জুড়ি আর একটি ব্যাপারও আমাদের দেশে দেখা যায়। এদেশে একদল বাজিকর আছে, যারা বন্দুকের গুলি থেকে আরম্ভ করে উত্তরােত্তর কামানের গোলা পর্যন্ত গলাধঃকরণ করে। তারপর একে একে সবগুলি উগলে দেয়। এর ভিতর যে অসাধারণ কৌশল আছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এই গেল। আর ওগলানো দর্শকের কাছে তামাসা হলেও—বাজিকরের কাছে তা প্রাণান্ত-পরিচ্ছেদ ব্যাপার। ও কারদানি করা তার পক্ষে যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি অপকারী। বলা বাহুল্য, সে বেচারা ঐ লােহার গোলা-গুলির এক কণাও জীর্ণ করতে পারে না। আমাদের ছেলেরাও তেমনি নোটনামক গুরুদত্ত নানা আকারের ও নানা প্রকারের গোলা-গুলি বিদ্যালয়ে গলাধঃকরণ করে পরীক্ষালয়ে তা উদগীরণ করে দেয়। এর জন্য সমাজ তাদের বাহবা দেয় দিক, কিন্তু মনে যেন না ভাবে যে এতে জাতির প্রাণশক্তি