পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এ ব্য, চতুর্থ সংখ্যা সাহিত্যের জাতরক্ষা ২২৩ সাহিত্যের জাতরক্ষার একটা ব্যবস্থা হওয়া নিতান্তই দরকার। ভারতবর্ষের মাটির এমনি গুণ! আমরা যে-সময়টায় বেঁচে আছি, সে সময়ের বাংলা সাহিত্য বললে প্রথমত ও প্রধানত রবীন্দ্রনাথকেই বােঝায়—এ কথাটা বললে অনেকের আরামের ব্যাঘাত ঘটবে জানি, কিন্তু আশা করি এটা মিথ্যা প্রলাপ নয়। এই রবীন্দ্রনাথের রচনা নাকি সব বিদেশী; কারণ তাঁর লেখা নাকি অতি সহজে ইংরেজিতে অনুবাদ করা যায়। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, তা ইংরাজিরই অনুবাদ। সেদিন আমার এক বাংলাভাষাভিজ্ঞ জাপানী বন্ধু বলছিলেন যে, শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের লেখা অতি সহজে জাপানীতে অনুবাদ করা যায়—সুতরাং তার লেখা যে জাপানী-সাহিত্যের অন্তর্গত, তার কোন ভুল নেই। কিছুদিন পূর্বে আমার এক তামিল বন্ধু বলছিলেন যে, (ইনিও বেশ বাংলা জানেন) বঙ্কিমের নভেলগুলাে জলের মতাে তামিলে অনুবাদ করা যায়। সুতরাং বঙ্কিম প্রকৃতপক্ষে বাংলা-সাহিত্য রচনা করেন নি—তিনি সেবা করেছেন আসলে তামিল-সাহিত্যের। অতএব এটা স্পষ্ট যে, বর্তমান বাংলা-সাহিত্য বলে কোন পদার্থই নেই। তার কিছুটা ইংরেজি, কিছুটা জাপানী, কিছুটা তামিল—আর বাকীটা হিন্দি, মারাঠি, ফারসী, ফরাসী, ইটালিয়ান ও রাশিয়ান মিশিয়ে। মধুসূদন যে খাটী জার্মান ভাষায় মেঘনাদবধ রচনা করেছেন, সেটা ত আমরা সবাই জানি। আশ্চৰ্য্য আমাদের সাহিত্যিকদের শক্তি ও আত্ম- ত্যাগ! এতদিন ধরে তারা কায়-মন-প্রাণে পরের সাহিত্যের শ্রবৃদ্ধি সাধন করে গেলেন। আর অপূৰ্ব আমরা ‘রি ভ্যান উইঙ্কলে নব সংস্করণ—জেগে থেকেও তাদের এ প্রতারণাটা ধরতে