পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা সাহিত্যের জতরক্ষা ২২৭ তাই। অনৈসর্গিক কারণে হতে হতে চলেছে—আর তার সাহিত্যে তারই ছাপ পড়ছে। সুতরাং একটা জাতীর জীবনে বিশেষ কোন সন তারিখ পর্যন্ত দাগ দিয়ে বলা চলে না যে সেই পৰ্যন্ত তার সাহিত্য জাতীয়, তার পর যা-তা পরদেশী। “জাতীয় সাহিত্য সম্বন্ধে আসল প্রশ্ন সেটা-“জাতীয় কি না ?” তা নয়—কিন্তু-“সাহিত্য কি না ?” কারণ সব পছই যেমন কাব্য নয়, তেমনি সব লেখাই সাহিত্য নয়। সুতরাং আজ আমাদের প্রশ্ন এ নয় যে, “আমাদের সাহিত্য সাত রক্ষা করে চলেছে কি না ?”-আমাদের প্রশ্ন এই যে “আমাদের জাতি সাহিত্য রচনা করে চলেছে কি না ?” কিন্তু আমাদের মধ্যে কেউ কেউ আমাদের সাহিত্য কোন্ সন পর্যন্ত জাতীয়, তার একটা হিসেব নিকেশ এর মধ্যেই করে ফেলেছেন। তারা বলতে শুরু করেছেন, যে বাংলা ভাষায় ফুল ফল আকাশ বাতাস চাদ চকোর দিয়ে যদি কোন কাব্য রচনা হয়, তবে সেটা হবে নিতান্ত বিদেশী; এবং বাঙ্গালী কবি যদি অনন্তের দিকে মুখ করে বসে থাকেন, তবে তাঁর কাব্যে জাতীয়তার প্রাণান্ত হবে—কারণ অনন্তের আলাে আর দিগন্তের বাতাসটা নাকি বাংলা ভাষার প্রাণে সয় না। অর্থাৎ এরা বলতে চান যে, মানুষের মুখের ভাষা তার প্রাণের আশার চাইতে বড় যেমন অনেকে বলে থাকেন যে মনুসংহিতার মুল মানুষের জীবনের গতি- ভঙ্গিমার চাইতে সত্য। আসল কথা হচ্ছে এই যে, অনন্তের আলাে ও দিগন্তের বাতাস বাঙ্গালী কবির অন্তরে তার মােহিনী রূপ ফেলেছে কিনা—তা যদি ফেলে থাকে তবে বাংলা ভাষায় তা মোহন হয়ে ফুটবেই। কারণ ভাষা মানুষের-মানুষ ভাষার নয়। মানুষই ভাষার জন্ম দিয়েছে আপনার আত্মা শক্তিতে--মানুষই শব্দে অর্থ দিয়েছে