পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম বর্ষ, প্রথম সং ছাই ঝরাইয়া দেয়, সে ত নূতন কিছু দেয় না, সে ভিতরের অগুনকে বাহির করিয়া আনে মাত্র। আত্মার প্রাণশক্তি যখন আরামের ছাই চাপা পড়ে, তখন সেই আরামকে দূর করিবার জন্য আসেন গুরু। ইন্ধন আপনাকে জ্বালাইয়া রাখিবার জন্য যদি চেষ্টা না করে, তবে তা নিবিয়া যায়। নিবিয়া যাওয়াটাই সহ অবস্থা, আরামের অবস্থা। গুরু মানুষই হউন, আর দেবতাই হউন, ঘা দিয়া দুঃখ দিয়া, আমাদের ভিতরকার যে তেজ ম্লান হইয়া আসিতেছিল তাহাকে উদ্দীপ্ত করিয়া দেন। আধ্যাত্মিক প্রদীপটি যাহাদের অন্তরে ম্লান হইয়া যাইতেছিল, তাহারা সেই গুরুর অপেক্ষা, জ্ঞাতসারে অজ্ঞাতসারে করিতে ছিল—যিনি খোচাদিয়া, অঘাত করিয়া তাহাকে জ্বালাইয়া তোলেন। চেষ্টার অভাবই জড়তা, প্রাণ মানুষের ভিতরের স্বতঃচেষ্টা। কিন্তু সব বিষয়ে, নব নব চেষ্টার সাহায্যে যদি প্রাণকে টিকিয়া থাকিতে হয়, তাতে ব্যাপার বড় কঠিন হয়। আমার প্রতিদিনই যদি খড়কুটা দিয়া ঘর তৈয়ারি করিতে হইত,শয়ন করিতে হইলে তুলা ধুনিয়া তােষক প্রস্তুত করিতে হইত, তৃষ্ণা পাইলেই কূপ খনন করিতে হইত, তাহা হইলে অবশ্য মনে হইতে পারিত, প্রাণের ক্রিয়া খুব প্রবলভাবে চলিতেছে। কিন্তু এ-অবস্থা চলতে পারে না। প্রাণের ধৰ্ম্ম নিয়ত চলা কিন্তু আমাদের শক্তি পরিমিত বলিয়া সে শক্তিকে আমাদের বাঁচাইয়া চলিতে হয়। পলি যদি আগাগােড়া জ্বলে তবে তাহার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়। প্রদীপ ততটুকুই জ্বলে যাহাতে আলাে হয়, যাহা না জ্বলিলে তাহার চলে না। প্রাণ তেমনিই ব্যবস্থার দ্বারা শক্তির অতিব্যয় নিবারণ করে।