পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ, ১৩৫ নিজের শক্তিকে প্রয়ােগ করিবার দিকেই প্রাণের উদ্যম, এবং তাহাতেই তাহার আত্মরক্ষা। ছােট ছেলে চেচাইবে, কাঁদিবে, দৌড়াইবে, এ তাহার পক্ষে ভাল। কিন্তু ধাত্রীর পক্ষে ইহা বিষম অসুবিধা জনক। ধাত্রী সেইজন্য কখন কখনও আফিম খাওয়াইয়া ছেলেকে ঝিমাইয়া রাখে। যাহার পরের ভার লয়,ইহাতে তাহাদের খুবই সুবিধা। সমাজের ধাত্রী দেখে, যেখানে প্রাণ প্রবল, সেখানে নিয়ম শাসনের ব্যতিক্রম ঘটে। কাজেই তাহাদের কসিয়া বাঁধিয়া, কিম্বা আফিমের ডালা খাওয়াইয়া নিজে করিয়া রাখিতে তাহার চেষ্টা হয়। বৌদ্ধ যুগের সময় হয়ত এদেশে প্রাণের একটু চাঞ্চল্য আসিয়াছিল—তাহার পর আমাদের রঘুনন্দনের দল সমাজকে আচারের বড় একটি আফিমের ভ্যালা খাওয়াইয়া নিশ্চিন্ত হইলেন। কোনও বিধির কারণ জিজ্ঞাসা করিবে না, কিন্তু উত্তর শিয়রে ইবে

পশ্চিমে বসিবে না ইত্যাদি। আমাদের দুর্গতির হয়ত এ এক

কারণ। অথবা হয়ত পােলিটিক্যাল কারণে আমরা দুর্বল হইয়া গিয়াছিলাম—এবং ক্লান্ত মানুষকে শােয়ান সহজ ; যে সবল, যাহার তেজ আছে, তাহাকে পাড়িয়া ফেলা সহজ নহে। তাই রঘুনন্দনের দল যখন চিন্তা না করা, দ্বিধা না করার মশারিঘেরা বিছানা করিয়া দিলেন, তখন শুইয়া পড়িলাম। হয় প্রাণ আপনিই নিশ্চেষ্ট হইয়া আসিয়াছিল বলিয়া ইহা ঘটিল, নচেৎ কর্তৃপক্ষ তাহাকে কমানাে দরকার মনে করিয়াছিলেন বলিয়া এইরূপ হইল। গুরুর কাল হইতেছে, কল যত আরাম দিক, তাহার হাত হইতে মানুষকে উদ্ধার করা। তিনি জানেন, সচেতন প্রাণই বল, জড়ের কাছে সে যেখানে জয়ী, সেইখানেই তাহার সার্থকত, তাই যথার্থ গুরু