পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম বর্ষ, সপ্তম ও অষ্টম সংখ্যা একখানি ছোট্ট উপন্যাস 88S বিবাহের পর বহুদিন বিজলী তার স্বামীর পল্লি-ভবনেই বাস করেছিল। সে বাড়ীতে থাকতেন। কুমারীশের একটি জ্যেষ্ঠ ভ্ৰাতাষ্ঠার স্ত্রী-পুত্র-পরিবার নিয়ে। বিজলীর হল তখন নদীর অবস্থা। নদী ধায় আপনার প্ৰেমাস্পদের উদেশে। যদি তার উদাম গতিবেগ প্ৰতিহত হয়, নদী তখন আপনার প্রাণের আবেগে দু’ধারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপনদীগুলোকেই ভরে তোলে। বিজলী তার বড় জায়ের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েগুলোকে এমনি আবেগের সঙ্গে ভালবাসতে লাগল, যেন তার ঐ ভালবাসাতেই আপনাকে একেবারে নিঃশেষ করে দিয়ে, সে আত্মবিস্মৃত হয়ে থাকতে চায়। গৃহকৰ্ম্মে যে বিজলীর মন না ছিল, তা নয় ; কিন্তু যার জীবনের মুখ্য ধারাই হল প্ৰাণের প্রেমের ধারা, সংসারের খুঁটিনাটি তুচ্ছ বিষয়গুলোর স্বার্থের বন্ধনে প্ৰাণটি তার কোনকালে কি বাধা পড়বে ? গৃহকৰ্ম্মে বিজলীর যেটুকু আগ্রহ ছিল, তার চাইতে ঢের বেশি উৎসাহে বিজলী তারা ভাশুর-কন্যা জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর খেলাঘরের কাজকৰ্ম্ম করত। আট বছরের বালিকা জ্যোতিৰ্ম্ময়ী তার নতুন খুড়িমাকে বেশ একজন খেলার সঙ্গিনী পেয়েছিল । জ্যোতিকে বিজলী বড় বেশি ভাল বাসস্থত। একদণ্ড তাকে সে চোখের আড়াল হতে দিত না। আর জ্যোতিও খুড়িমার ভারি ভক্ত হয়ে উঠেছিল। মেয়েটি যেন ছিল প্ৰাণেরই একটা ঢেউ। একদণ্ড সে স্থির হয়ে বস্তে পারত না। একমুহূৰ্ত্তও তার মুখটি বন্ধ থাকত না। একটি তরঙ্গের মতই জ্যোতি সদাসর্বদা খলখল করে নোচে-কুঁদে বেড়াত। হাত নেড়ে, চােখ ঘুরিয়ে, ঘাড় বাঁকিয়ে, লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে, মুখের প্রতি শব্দটিকে র উচ্ছাসে ভরে তুলে জ্যোতি যখন কথা