পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৬৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম বর্ষ, স্বাদশ সংখ্যা সামাজিক সাহিত্য ܡܕܡ সংস্করণের বহুল প্রচার তার কারণ নয় । কালের আবৰ্ত্তনে বাঙালী যখন বহুবর্ষ সঞ্চিত জড়তা দূরে ফেলে দিয়ে, নূতন আশার আলোকে স্নাত পুলকিত হয়ে, নূতন ব্ৰতে দীক্ষিত হবার আশায় উৎসুক উন্মুখ উদগ্র হয়ে উঠেছিল, তখনই তা তারা নতুন করে ঋষিরূপে বঙ্কিমচন্দ্ৰকে আবিষ্কার করতে পেরেছিল।-তখনই ত দেশব্ৰতের বীজ-মন্ত্র “বন্দেমাতরম” ভূমিষ্ঠ হ’য়েছিল। এ কথা যে কেবল বঙ্কিমচন্দ্ৰ সম্বন্ধেই খাটে, তা নয়। রাজা রামমোহন থেকে আরম্ভ করে” স্বামী বিবেকানন্দ পৰ্য্যন্ত সবাইকেই আমরা আজ নবতর ভাবে পেয়েছি । আমাদের মনের কোণে সনাতন জড়তার ধূলায় অবলুষ্ঠিত হয়ে, যে অনাদৃত সপ্তস্বরা পড়ে ছিল, কালের টানে তার তারে তারে যে আজ সুর যোজন হয়ে গেছে, তাই না তাদের মনের অনুরণন, তাদের বাণীর প্রতিধ্বনি আজ আমাদের কাছে এত সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এন্মি করে চিরদিনই সমাজ সাহিত্য থেকে প্রয়োজন এবং প্ৰয়াস অনুযায়ী ভাব আহরণ করে আপনাকে সুস্থ পুষ্ট এবং বলিষ্ঠ করেছে। কিন্তু তাই বলে কি সমাজের প্রয়োজন খুটিয়ে, সমাজের বায়নায়, সমাজের তাগিদে কখনো সাহিত্য গড়ে উঠেছে ? আমার বিশ্বাস এমন ধারা “সামাজিক-সাহিত্য” গড়বার চেষ্টা নিতান্তই পাণ্ডশ্রম। পাখার বাতাসে নৌকার পালে হাওয়া লাগে না, তার জন্যে চাই স্বভাব-দত্ত মুক্তপবন । প্রতিভার দিব্য দৃষ্টির সাহায্যে আত্ম-সমাহিত সাহিত্যিক যে কল্পলোকের সৃষ্টি করেন বর্তমানের বস্তুতন্ত্রতার মাপ কাটিতে তা যতই কেন নিরর্থক প্রমাণিত হোক না, ভবিষ্য-সমাজের সেই হবে পাথেয় ।