পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৬৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VAR সবুজ পত্ৰ চৈত্র, ১৩২৫ সেবার সমাহিত অবস্থায় । সমাজের দোষগুণ সম্বন্ধে সাহিত্য-সেবী অজ্ঞ থাকবেন এমন কথা বলা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, আমরা কেবল চাই-ও সবেতে তিনি থাকবেন সম্পূর্ণ অনাচ্ছিন্ন। সাহিত্যিকের প্রতিভা যদি সুস্থ এবং অবিকৃত থাকে। তবে তঁার রচনা, তঁর সৃষ্টি সামাজিক পাপ এবং মিথ্যাকে স্বভাবতই তিরস্কৃত করবে। সে জন্যে র্তার দিক থেকে অধিকন্তু কোনো চেষ্টার আর সমাজের তরফ থেকে উদ্দীপনা বা উৎসাহের কোনো প্রয়োজনই হবে না । সৃষ্টির আনন্দ আর প্রকাশের উত্তেজনাই হবে সাহিত্যের চিরন্তন প্রেরণা। তার চেয়ে সঙ্কীর্ণতর কোনো উদ্দেশ্যেই লেখকের সাহিত্য-প্ৰতিভাকে নিঃশেষে উৎসাৱিত করতে পারবে না । সাহিত্য থেকে দেশ-কালোপযোগী ভাব এবং শক্তি সংগ্ৰহ করা সমাজের পক্ষে সর্বতোভাবেই কৰ্ত্তব্য ; কিন্তু সমাজের হিতকল্পে দেশকালোপযোগী সাহিত্যের আশা এবং আমদানীর চেষ্টা গাভীর বাটে দরকারী-মাফিক দুধের পরিবৰ্ত্তে দই, ক্ষীর, ছানা, মাখনের প্রত্যাশার মতই অসঙ্গত। এবম্বিধ অসঙ্গত আশার বশবৰ্ত্তী হয়ে সাহিত্যসমালোচনা প্রসঙ্গে আমরা কখনো হতাশ, কখনো বা উত্তেজিত এবং নিতান্ত কদাচিত পরিতুষ্ট হয়ে থাকি। দরকারের মূৰ্ত্তি এবং মাত্রা প্ৰত্যেকেরই আমাদের স্বতন্ত্র, কাজেই তার মাপকাটিতে সাহিত্য মেপে সন্তোষজনক কোনো সাধারণমীমাংসায় উপনীত হবার সম্ভাবনা নিতান্তই কুম। আর, এ ক্ষেত্রে লেখক ও পাঠকের দরকারের দ্বন্দ্ব চিরদিনই থাকবে। অন্তত তার পরিপূর্ণ মিলন চন্দ্ৰগ্ৰহণ সূৰ্যগ্রহণের মতই সাস্বাৎসরিক এবং স্মরণীয় ব্যাপারৰিলে পরিগণিত হবে ।