পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিঠিপত্র సి অরণ্যে কাটিয়া গেল, শেষেই বা কি মুখ পাইলেন । হরিশ্চন্দ্র যে এত কষ্ট পাইলেন, এত ত্যাগ করিলেন, অবশেষে কবি র্তাহার কাছ হইতে , পুণ্যের শেষ পুরস্কার স্বৰ্গও কাড়িয়া লইলেন। ভীষ্ম যে রাজপুত্র হইয়া সন্ন্যাসীর মত জীবন কাটাইলেন, তাহার সমস্ত জীবনে সুখ কোথায় ! সমস্ত জীবন যিনি আত্ম-ত্যাগের কঠিন শয্যায় গুইয়াছিলেন মৃত্যুকালে তিনি শরশয্যায় বিশ্রাম লাভ করিলেন ! এককালে মহৎভাবের প্রতি আমাদের দেশের লোকের এত বিশ্বাস এত নিষ্ঠ ছিল ! তাহারা মহত্ত্বকেই মহত্ত্বের পরিণাম বলিয়া জানিতেন, ধৰ্ম্মকেই ধৰ্ম্মের পুরস্কায় জ্ঞান করিতেন। আর আজকাল । আজকাল আমাদের এমনি হইয়াছে যে কেরাণীগিরি ছাড়া আর কিছুরই উপরে আমাদের বিশ্বাস নাই—এমন কি বাণিজ্যকেও পাগ্‌লামী জ্ঞান করি! দরখাস্তকে ভবসাগরের তরণী করিয়াছি, নাম সহি করিয়া আপনাকে বীর মনে করিয়া থাকি । আজ তোমাতে আমাতে ভাব হইল ভাই! মহত্বের একাল আর সেকাল কি ? যাহা ভাল তাঁহাই আমাদের হৃদয় গ্রহণ করুকু, যেখানে ভাল সেখানেই আমাদের হৃদয় অগ্রসর হউক্‌ ! আমাদের লঘুতা, চপলতা, সঙ্কীর্ণতা দূরে থাকৃ! অজ্ঞতা ও ক্ষুদ্রত হইতে প্রস্থত বাঙালীসুলভ অভিমানে মোটা হইয়া চক্ষু রুদ্ধ করিয়া আপনাকে সকলের চেয়ে বড় মনে না করি ও মহৎ হইবার আগে দেশ-কাল-পাত্রনির্বিশেষে মহতের চরণের ধূলি লইতে পারি এমন বিনয় লাভ করি। শুভাশীৰ্ব্বাদক শ্ৰীষষ্ঠীচরণ দেবশৰ্মণঃ