পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিঠিপত্র S ov) বিনাইয়া একটিমাত্র বিরহিণীর বৈঠকি কান্না নয়, প্রেমে আকুল হইয় নীলাকাশের তলে দাড়াইয়া সমস্ত বিশ্বজগতের ক্ৰন্দনধ্বনি । তাই আশা হইতেছে, আর একদিন হয় ত আমরা একই মত্ততায় পাগল হইয়া সহসা একজাতি হইয়া উঠিতে পাবিব। বৈঠকখানার আসবাব ছাড়িয়া সকলে মিলিয়া রাজপথে বাহির হইতে পারিব। বৈঠকি ধ্রুপদ খেয়াল ছাড়িয়া বাজপৰ্থী কীৰ্ত্তন গাহিতে পারিব । মনে হইতেছে এখনি বঙ্গদেশের প্রাণের মধ্যে একটি বৃহৎ কথা প্রবেশ করিয়াছে, একটি আশ্বাসের গান ধ্বনিত হইতেছে, তাই সমস্ত দেশটা মাঝে মাঝে টলমল করিয়া উঠিতেছে। এ যখন জাগিয উঠিবে তখন আজিকার দিনের এই সকল সংবাদপত্রের মেকি সংগ্রাম, শত সহস্ৰ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তর্ক বিতর্ক ঝগড়াঝাটি সমস্ত চুলায় যাইবে, আজিকার দিনের বড় বড় ছোটলোকদিগের নখে তাক গণ্ডীগুলি কোথায় মিলাইয়া যাইবে । সেই আর একদিন বাংলা একাকার হইবে ! প্রকৃত স্বাধীনত ভাবের স্বাধীনতা । বৃহৎ ভাবের দাস হইলেই আমরা স্বাধীনতার প্রকৃত মুগ ও গৌরব অনুভব করিতে পারি। তখন কেই বা রাজা কেই বা মন্ত্রী ! তখন একটা উচু সিংহাসনমাত্র গড়িয়া আমাদের চেয়ে কেহ উচু হইতে পারে না । সেই গৌরব হৃদয়ের মধ্যে অনুভব করিতে পারিলেই আমাদের সহস্ৰ বৎসরের অপমান দূর হইয়া যাইবে, আমরা সকল বিষয়ে স্বাধীন হইবার যোগ্য হইব । আমাদের সাহিত্য যদি পৃথিবীর সাহিত্য হয়, আমাদের কথা যদি পৃথিবীব কাজে লাগে, এবং সে-সুত্রেও যদি বাংলার অধিবাসীরা পৃথিবীর অধিবাসী হইতে পারে—তাহা হইলেও আমাদের মধ্যে গৌরব জন্মিবে— হীনত ধূলার মত আমরা গ৷ হইতে ঝাড়িয়া ফেলিতে পারিব। কেবলমাত্র বন্দুক ছড়িতে পারিলেই যে আমরা বড়লোক হইব তাহ নহে, পৃথিবীর কাজ করিতে পারিলে তবে, আমরা বড়লোক হইব ।