পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিঠিপত্র ? ο Φζ বিদেশে গিয়া যে, বাঙালী জাতির উন্নতি-আশা তোমার মনে উচ্ছসিত হইয়াছে, তাহার গুটিকতক কারণ আছে। প্রধান কারণ— এখানে তোমার অজীর্ণ রোগ ছিল, সেখানে তোমার খাদ্য জীর্ণ হইতেছে, এবং সেই সঙ্গে ধরিয়া লইতেছ যে, বাঙালী মাত্রেরই পেটে অন্ন পরিপাক পাইতেছে—এরূপ অবস্থায় কাহার না আশার সঞ্চার হয় ? কিন্তু আমি অম্লশূল পীড়ায় কাতর বাঙালীসন্তান—তোমার চিঠিটা আমার কাছে আগাগোড়াই কাহিনী বলিয়া ঠেকিতেছে। পেটে আহার জীর্ণ হওয়া এবং না হওয়াব উপর পৃথিবীর কত সুখ দুঃখ মঙ্গল অমঙ্গল নির্ভর করে তাহ কেহ ভাবিয়া দেখে না। পাকযন্ত্রের উপর যে-উন্নতির ভিত্তি স্থাপিত হয় নাই সে-উন্নতি ক’দিন টিকিতে পারে! জঠরানলের প্রখর প্রভাবই মনুষ্যজাতিকে অগ্রসর করিয়া দেয়। যে জাতির ক্ষুধা কম, সে জাতি থাকিলেও হয় গেলেও হয় তাহার দ্বারা কোনে কাজ হইবে না। যে জাতি আহার করে অথচ হজম করে না, সে-জাতি কখনই সদগতি প্রাপ্ত হইতে পারে না । বাঙালী জাতিব অমরোগ হইল বলিয়া বাঙালী কেরাণীগিরি ছাড়িতে পারিল না। তাহার সাহস হয় না, আশা হয় না, উদ্যম হয় না । এ-জন্ত বেচারাকে দোষ দেওয়া যায় না। আমাদের শরীর অপটু, বুদ্ধি অপরিপক্ক, উদরান্ন ততোধিক। অতএব সমাজসংস্কারের ন্তায় পাকযন্ত্রসংস্কারও আমাদের আবশুক হইয়াছে। আনন্দ না থাকিলে উন্নতি হইবে কি করিয়া ! আশা উৎসাহ সঞ্চয় করিব কোথা হইতে ! অকৃতকাৰ্য্যকে সিদ্ধির পথে, বার বার অগ্রসর করিয়া দিবে কে ! আমাদের এই নিরাননের দেশে উঠিতে ইচ্ছা করে না, কাজ করিতে ইচ্ছা করে না, একবার পড়িয়া গেলেই মেরুদণ্ড ভাঙ্গিয়া যায়। প্রাণ না দিলে কোনো কাজ হয় না–কিন্তু প্রাণ দিব কিসের পরিবর্তে ! আমাদের প্রাণ কাড়িয়া লইবে কে !