পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আচারের অত্যাচার

শেষ করে—এই জন্য আরম্ভ কাল হইতেই তাহারা শক্ত সমর্থ। মানুষের জীবনের পরিধি বহুবিস্তীর্ণ, এই জন্য বহুকাল পর্য্যন্ত সে অপরিণত দুর্ব্বল।

 জন্তুরা যে স্বাভাবিক নৈপুণ্য লইয়া জন্মগ্রহণ করে ইংরাজিতে তাহাকে বলে ইনষ্টিংক্ট্, বাংলায় তাহার নাম দেওয়া যাইতে পারে সহজ-সংস্কার। সহজ-সংস্কার অশিক্ষিত-পটুত্ব একেবারেই ঠিক পথ দিয়া চলিতে পারে, কিন্তু বুদ্ধি ইতস্তত করিতে করিতে ভ্রমের মধ্য দিয়া আপনার পথ সন্ধান করিয়া বাহির করে। সহজ-সংস্কার পশুদের বুদ্ধি মানুষের। সহজ-সংস্কারের গম্যস্থান সামান্য সীমার মধ্যে, বৃদ্ধির শেষ লক্ষ্য এ-পর্য্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নাই।

 আমরা মানব সন্তান বলিয়াই বহুকাল আমাদের শারীবিক মানসিক দুর্ব্বলতা; বহুকাল আমরা পড়ি, বহুকাল আমরা ভুলি, বহুকাল আমাদিগের শিক্ষা করিতে যায়,—আমরা অনন্তের সন্তান বলিয়া বহুকাল ধরিয়া আমাদের আধ্যাত্মিক দুর্ব্বলতা, পদে পদে আমাদের দুঃখ, কষ্ট, পতন। কিন্তু সেই আমাদের সৌভাগ্য, সেই আমাদের চিরজীবনের লক্ষণ, তাহাতেই আমাদিগকে বলিয়া দিতেছে এখনও আমাদের বুদ্ধি ও বিকাশের শেষ হইয়া যায় নাই।

 শৈশবেই যদি মানুষের উপসংহার হইত, তাহা হইলে মানুষের মত অপরিস্ফুটতা সমস্ত প্রাণীসংসারে কোথাও পাওয়া যাইত না, অপরিণত পদস্খলিত ইহজীবনেই যদি আমাদের পরিসমাপ্তি হয় তবে আমরা একান্ত দুর্ব্বল ও হীন তাহার আর সন্দেহ নাই। কিন্তু আমাদের বিলম্ববিকাশ, আমাদের ত্রুটি, আমাদের পাপ আমাদের সম্মুখবর্ত্তী সুদূর ভবিষ্যতের সূচনা করিতেছে। বলিয়া দিতেছে, কড়া, ক্রান্তি, কাক, দন্তি চোখ-বাঁধা ঘানির বলদের জন্য; সে তাহার পূর্ব্ববর্ত্তীদের পদচিহ্নিত একটি ক্ষুদ্র সুগোলচক্রের মধ্যে প্রতিদিন পাক খাইয়া সর্ষপ হইতে তৈল