সমাজের সহিত যুক্ত নাই। এখানকার ইংরেজ-সমাজ হয় সিবিলিয়ানসমাজ, নয় বণিক-সমাজ, নয় সৈনিক-সমাজ। তাহারা তাহাদের বিশেষ কার্য্যক্ষেত্রের সঙ্কীর্ণতার দ্বারা আবদ্ধ। এই সকল ক্ষেত্রের সংস্কার সকল সর্ব্বদাই তাহাদের চরিদিকে কঠিন আবরণ রচনা করিতেছে, বৃহৎ মনুষ্যত্বের সংস্পর্শে সেই আবরণ ক্ষয় করিয়া ফেলিবার জন্য কোনো শক্তি তাহাদের চারিদিকে প্রবলভাবে কাজ করিতেছে না। তাহারা এদেশের হাওয়ায় কেবল কড়া সিবিলিয়ান, পূরা সদাগর এবং ষোল আনা সৈনিক হইয়া পাকিয়া উঠিতে থাকে; এই কারণেই ইহাদের সংস্রবকে আমরা মানুষের সংস্রব বলিয়া অনুভব করিতে পারি না। এই জন্যই যখন কোনো সিভিলিয়ান হাইকোর্টের জজের আসনে বসে, তখন আমরা হতাশ হই; কারণ, তখন আমরা জানি এ লোকটির কাছ হইতে যথার্থ বিচারকের বিচার পাইব না, সিভিলিয়ানের বিচারই পাইব; সে বিচারে ন্যায়ধর্ম্মের সঙ্গে যেখানে সিভিলিয়ানের ধর্ম্মের বিরোধ ঘটিবে, সেখানে সিভিলিয়ানের ধর্ম্মই জয়ী হইবে। এই ধর্ম্ম ইংরেজের শ্রেষ্ঠ প্রকৃতিরও বিরুদ্ধ, ভারতবর্ষেরও প্রতিকূল।
আবার যে ভারতবর্ষের সঙ্গে ইংরেজের কারবার, সেই ভারতবর্ষের সমাজও নিজের দুর্গতি দুর্ব্বলতা বশতই ইংরেজের ইংরেজত্বকে উদ্বোধিত করিয়া রাখিতে পারিতেছে না; সেই জন্য যথার্থ ইংরেজ এদেশে আসিলে ভারতবর্ষ যে ফল পাইত সেই ফল হইতে সে বঞ্চিত হইতেছে। সেই জন্যই পশ্চিমের বণিক সৈনিক এবং আপিস আদালতের বড় সাহেবদের সঙ্গেই আমাদের সাক্ষাৎ ঘটে, পশ্চিমের মানুষের সঙ্গে পূর্ব্বের মানুষের মিলন ঘটিল না। পশ্চিমের সেই মানুষ প্রকাশ পাইতেছে না বলিয়াই এদেশে যাহা কিছু বিপ্লব বিরোধ, আমাদের যাহা কিছু দুঃখ অপমান। এবং এই যে প্রকাশ পাইতেছে না, এমন কি, প্রকাশ বিকৃত হইয়া যাইতেছে, সেজন্য আমাদের পক্ষেও যে পাপ আছে,