পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
সমাজ

আমাদিগকে ভয় দেখাইতে, কোনে। লোকাচার আমাদিগকে নিষেধ করিতে পারে না।

 বাঁধও ভাঙ্গিয়াছে। কেহ শাস্ত্র ও লোকাচারের মুখ চাহিয়া বসিয়া নাই। বঙ্গগৃহ হইতে সন্তানগণ দলে দলে সমুদ্রপার হইতেছে। এবং ক্ষীণবল সমাজ তাহার কোনো প্রতিবিধান করিতে পারিতেছে না। সমাজের প্রধান বল নীতিবল যখন চলিয়া গিয়াছে, তখন তাহাকে বেশিদিন কেহ ভয় করিবে না। যে সমাজ মিথ্যাকে, কপটতাকে মার্জ্জনা করে, অর্দ্ধগুপ্ত অনাচারের প্রতি জানিয়া শুনিয়া চক্ষু নির্মীলন কবে, যাহার নিয়মের মধ্যে কোনো নৈতিক কারণ, কোনো যৌক্তিক সঙ্গতি নাই, সে যে নিতান্ত দুর্ব্বল। সমাজের সমস্ত বিশ্বাস যদি দৃঢ় হইত, যদি সেই অগণ্ড বিশ্বাস অনুসারে সে নিজের সমস্ত ক্রিয়াকলাপ নিয়মিত করিত, তবে তাহাকে লঙ্ঘন করা বড় দুরূহ হইত।

 যাঁহারা শুভ বুদ্ধির প্রতি নির্ভর না করিয়া শাস্ত্রের দোহাই দিয়া সমুদ্রযাত্রা করিতে চান, তাঁহারা দুর্ব্বল। কাবণ, তাঁহাদের পক্ষে কোনো যুক্তি নাই—সমাজ শাস্ত্রমতে চলে না।

 দ্বিতীয় কথা এই, লোকাচার যে সমুদ্রযাত্রা নিষেধ করে তাহার একটা অর্থ আছে। হিন্দুসমাজের অনেকগুলি নিয়ম পরস্পর দৃঢসম্বন্ধ। একটা ভাঙ্গিতে গেলে আর একটা ভাঙ্গিয়া পড়ে। রীতিমত স্ত্রীশিক্ষা প্রচলিত করিতে গেলে বাল্যবিবাহ তুলিয়া দিতে হয়। বাল্যবিবাহ গেলে ক্রমশই স্বাধীনবিবাহ আসিয়া পড়ে। স্বাধীনবিবাহ প্রচলিত করিতে গেলে সমাজের বিস্তর রূপান্তর অবশ্যম্ভাবী হইয়া পড়ে এবং জাতিভেদের মূল ক্রমে জীর্ণ হইয়া আসে। কিন্তু তাই বলিয়া এখন স্ত্রীশিক্ষা কে বন্ধ করিতে পারে?

 সমুদ্রপার হইয়া বিদেশযাত্রাও আমাদের বর্ত্তমান সমাজ রক্ষার