পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
সমাজ

আছে, বহুব্যসসাধ্য নিমন্ত্রণ আমন্ত্রণে তাহাদেরও টানাটানি পড়িয়াছে—, যাহাদের অল্প আয়, তাহাদের ত কথাই নাই। ইহাতে লোকের বিবাহে অপ্রবৃত্তি হইয়া তাহার বহুবিধ কুফল ফলিতেছে।

 এই ভোগ এবং আড়ম্বরের ঢেউ আমাদের দেশেও যে উত্তাল হইয়া উঠিয়াছে, সে-কথা কাহারো অগোচর নহে। অথচ আমাদের দেশে আয়ের পথ বিলাতের অপেক্ষা সঙ্কীর্ণ। শুধু তাই নয়। দেশের উন্নতির উদ্দেশে যে-সকল আযোজনের আবশ্যক আছে, অর্থাভাবে আমাদের দেশে তাহা সমস্তই অসম্পূর্ণ।

 আড়ম্বরের একটা উদ্দেশ্য লোকের কাছে বাহবা পাওয়া। এই বাহবা পাইবার প্রবৃত্তি এখনকার চেয়ে পূর্ব্বকালে অল্প ছিল, সে-কথা মানিতে পারি না। তখনও লোকসমাজে খ্যাত হইবার ইচ্ছা নিঃসন্দেহ এখনকার মতই প্রবল ছিল। তবে প্রভেদ এই—তখন খ্যাতির পথ একদিকে ছিল, এখন খ্যাতির পথ অন্যদিকে হইয়াছে।

 তখনকার দিনে দানধ্যান, ক্রিয়াকর্ম্ম, পূজাপার্ব্বণ ও পূর্ত্তকার্য্যে ধনী ব্যক্তির খ্যাতিলাভ করিতেন। এই খাতির প্রলোভনে নিজের সাধ্যাতিরিক্ত কর্ম্মানুষ্ঠানে অনেক সম্পন্ন গৃহস্থ নিঃস্ব হইয়াছেন এমন ঘটনা শুনা গেছে।

 কিন্তু, এ-কথা স্বীকার করিতে হইবে যে, যে আড়ম্বরের গতি নিজের ভোগলালসা তৃপ্তির দিকে নহে, তাহা সাধারণত নিতান্ত অসংযত হইয়া উঠে না, এবং তাহাতে জনসাধারণের মধ্যে ভোগের আদর্শকে বাড়াইয়া তুলিয়া চতুর্দ্দিকে বিলাসের মহামারী সৃষ্টি করে না। মনে কর, যে ধনীর গৃহে নিত্য অতিথিসেবা ছিল, তাঁহার এই সেবার ব্যয় যতই বেশী হউক্ না অতিথিরা যে আহার পাইতেন তাহাতে বিলাসিতার চর্চ্চা হইত না। বিবাহাদি কর্ম্মে রবাহূত অনাহূতদের নিষেধ ছিল না বটে, কিন্তু তাহার ফলে যজ্ঞের আয়োজন বৃহৎ